ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব

দিন দিন শিক্ষিত জনসংখ্যার পরিমাণ যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে চাকুরির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই অপ্রতুল। শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি শেষে চাকুরির পিছনে সময় ব্যয় করতে করতে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান বাজারে চাকুরি পেতে ন্যুনতম ৫ লক্ষ থেকে শুরু করে ২০ লক্ষ বা তারও বেশি ঘুষ দিয়ে চাকুরি পেতেও অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। কেউ কেউ শত চেস্টা করেও চাকুরি না পেয়ে বেকারত্বের অভিশাপে আত্বহত্যায় জীবনকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়।

ফ্রিল্যান্সিং একজন কর্মট, পরিশ্রমী, উদ্যেমী মানুষকে প্রত্যন্ত  অঞ্চল থেকে বেরিয়ে এসে এমন কিছু কাজ করার সুযোগ দেয় যা একজন চাকুরিদাতা সর্বদা চেয়ে থাকেন। চাকুরিদাতা সঠিক কাজের লোকটি খুজে পেতে খুব দ্বিধাগ্রস্ত হতে হয়। অনেক তরুণ বয়সী পেশাজীবী রয়েছেন যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু তাদের কাজ করার সময় খুব কম। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে, তাদের সমস্থ কাজ করিয়ে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।ফ্রিল্যান্সিং বিচ্ছিন্ন নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে উচ্চস্তরের কর্মসংস্থান পেতে সক্ষম করে। ফ্রিল্যান্সার কার সাথে কাজ করবে তা বাছাই করার ক্ষমতা আরেকটি সুবিধা। ফ্রিল্যান্সার একজন সম্ভাব্য ক্লায়েন্টের সাথে ভার্চুয়াল পন্থায় যোগাযোগ করে যে কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির সাথে কাজ করবে কি না তা বেছে নেবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগান্তকারী সুযোগ গুলোকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে ইন্টারনেটের সাহায্যে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করার জনপ্রিয় কাজটিই হলো ফ্রিল্যান্সিং। এই ডিজিটাল সুবিধাকে কাজে লাগানোর পূর্বে জানা দরকার ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব সর্ম্পকে। নিচে কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।


ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব freelancing importance



১) ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন পেশা। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং।

২) প্রচলিত চাকুরির প্রতিযোগিতা থেকে তুলনামূলক সহজ।

৩) ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আনলিমিটেড কাজের সম্ভাবনা।

৪) একাধিক কাজের দক্ষতার উপর কাজ করা যায়।

৫) আজীবন কাজ পাওয়ার অপার সম্ভাবনা।

৬) কাজের পারিশ্রমিক পাওয়ার জন্য মাসের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না।

৭) নিজের বেকারত্ব ঘুচানোর পাশাপাশি অন্যকেও কাজের ব্যবস্থা করা যায়।

৮) কাজ পাওয়ার জন্য কারো সুপারিশ বা টাকা পয়সার প্রয়োজন হয় না।

৯) ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রচলিত চাকুরির মতো ইন্টারভিউ দিয়ে চাকুরি নিতে হয় না।


ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা কি?

১) নিজের বেকারত্বের অভিশাপ ঘুছানো যায়।

২) বেকারদের চাকুরি দেওয়ার সুযোগ।

৩) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয় না।

৪) এই সেক্টরে জালিয়াতি করে টাকা ইনকাম করার সুযোগ খুবই অপ্রতুল।

৫) বছরের পর বছর কাজ শিখার দরকার হয় না।

৬) প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলের যে কেউ ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে।

৭) কাজের দক্ষতা অনুযায়ী সহজেই যেকোনো কাজ খুজে বের করা যায়।

৮) ঘরে বসে ইনকাম করার অন্যতম সুবিধা।

৯) ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো সাধারণ চাকুরি বা অন্যকোনো পেশায় করা যায় না।


ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা কি কি?

১) ইন্টারনেট ছাড়া কাজ করা যায় না।

২) ভালো কাজ করার পরও খারাপ বায়ারদের কাছ থেকে খারাপ রিভিউ পাওয়া।

৩) ইংরেজী জানা বাধ্যতামূলক।

৪) ব্যাক্তিগত বিপদ আপদে কাজ জমা দিতে না পারলে রিভিউ খারাপ দেওয়া হয়।

৫) হাতে কলমে কাজ বুঝে নেওয়ার সুযোগ নেই।

৬) নগদে টাকা পয়সার লেনদেন করা যায় না।

৭) টাকা পেমেন্ট নেওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সিং বান্ধব ব্যাংক সার্ভিস নেই।

৮) পেমেন্ট উত্তোলন করার জন্য ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন হয়।

৯) একজন ব্যক্তি দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং করতে কস্ট সাধ্য ব্যাপার, এক্ষেত্রে টিমওয়ার্কিং করার প্রয়োজন হয়।

১০) নতুন অবস্থায় সহজ কাজ গুলোর ফ্রিল্যান্সার বেশি থাকায় কাজ পেতে কস্ট হয়।


আরো পড়ুন > ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? ফ্রিল্যান্সিংয়ে কিভাবে ইনকাম করে।


ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

এই বিষয়টি আপনার উপরই ছেড়ে দেওয়া যাক। ধরুন আপনাকে একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় বলা হলো যদি প্রথম স্থান অর্জন করতে পারেন তাহলে পুরস্কার হিসেবে পাবেন ১০ লক্ষ টাকা। যদি দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেন তাহলে পাবেন ৫ লক্ষ টাকা। তৃতীয় হলে ১ লক্ষ টাকা। এবার আপনি বলেন তো কোনটি আপনি নিতে চাইবেন? নিশ্চয়ই প্রথমটি? এবার আসা যাক প্রথমটি যে নিতে চাইবেন সেই অনুযায়ী আপনার শক্তিমত্তা কেমন? আপনার প্রতিদ্বন্দীদের চেয়ে আপনার শক্তি বেশি না কম? যদি শক্তি কম থাকে করণীয় কি? ঠিক একইভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারটাও এরকম, যতবেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, তত বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যদি তা না হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায় এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা মানেই হয়না। বাংলাদেশে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যাদের মাসিক ইনকাম নূন্যতম ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকার উর্দ্ধে। আবার অনেক ফ্রিল্যান্সার শুরুতে ভালো করলেও ধীরে ধীরে এই মার্কেট থেকে ছিটকে পড়ে যায়।

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট- ফাইবার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, গুরু, টপটাল, পিপল পার হাউয়ার, একুয়েন্ট, ৯৯ ডিজাইন উল্লেখযোগ্য। আপনি এসব সাইটে গিয়ে টপ লেভেল ফ্রিল্যান্সারদের মোট কাজের সংখ্যা ও রিভিউ দেখে অনুমান করতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়? সেখানে এমন টপ লেভেল ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যাদের ঘন্টায় ইনকাম ১০০ থেকে ২০০ ডলার!!

আপনার যদি এই অনলাইন জগতে কাজ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আমি বলবো টাকা আয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে কাজ শুরু করে দিন। কত টাকা আয় করবেন সেটা সময়ের সাথে সাথে টের পেয়ে যাবেন। ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করা যায় ও বিশ্বস্থ ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম রয়েছে এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। আপনিও কাজ শুরু করুন, অনলাইন থেকে আয় নিয়ে টেনশন করতে হবেনা।


ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ কিভাবে পাবো?

কাজ পাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ভালো মানের প্রোফাইল তৈরী করতে হবে। তারপর ফাইবার কিংবা ফিল্যান্সার বা অন্যান্য প্লাটফর্মের টপ রেটেড সেলারদের প্রোফাইল ও তাদের কাজের বিবরণ, ঘন্টা প্রতি কাজের রেট কত সবগুলো দেখে মোটামুটি আইডিয়া নিয়ে আপনার প্রোফাইলটিকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে ঘুছিয়ে লিখতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পাওয়ার জন্য যেসব কাজগুলো আপনি শিখতে পারেন-ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন/ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও মার্কেটিং ইত্যাদি। নিজের প্রোফাইলের About Me ,Portfolio Items , Resume এগুলার দিকে ফোকাস দেয়া, প্রোফাইল সঠিক তথ্য দিয়ে সাজানো, সঠিকভাবে পোর্টফলিও এড করা, verification সম্পূর্ন করা, ফেসবুক এর সাথে কানেকশন তৈরি করা, সঠিক স্কিল ক্যাটাগরি নির্বাচন করা, Education, Experience এবং  Qualifications সেকশন সাজানো । তারপর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পাওয়ার জন্য নিচের উপায় অনুসরণ করতে পারেন।

০১) বায়ার রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে,

০২) অন্যান্য সেলারদের রিভিউ থেকে ক্লাইন্টদের সাথে যোগাযোগ করে,

০৩) বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে,

০৪) পরিচিত ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যোগাযোগ করে কাজের ব্যাপারে কথা বলে।

০৫) নিজের ইউটিউব চ্যানেল, ব্লগিং সাইটের মাধ্যমে প্রচার করে।


আরো পড়ুন > Freelancing মার্কেটে কাজ কিভাবে পাবো?ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করব?


ফ্রিল্যান্সিং কেন করব?

শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি শেষে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কখনো দেখেছেন কি? চাওয়া মাত্র সহজে চাকুরি পেতে? শিক্ষাজীবনের পনেরো বিশ বছর শেষ করে যখন চাকুরি নামের সোনার হরিণের পিছনে ছুটে হতাশ হতে হয়; বেকারত্বের অভিশাপে পরিবার ও সমাজ থেকে তিরস্কার শুনতে শুনতে জীবনটাকে তুচ্ছ মনে হয়, সেই অবস্থা থেকে নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্যই ফ্রিল্যান্সিং করার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করে টাকা ইনকাম শুরু করতে সব্বোর্চ ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। তবে অবশ্যই আপনাকে যে কোনো একটি কাজের উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং কেন করব এই প্রশ্নের উত্তরে আমি কয়েকটি কারণ তুলে ধরছি।


০১) প্রতিযোগিতামূলক চাকুরি থেকে নিজের ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলতে ফ্রিল্যান্সিং করা প্রয়োজন।

০২) বেকারত্বের হার কমাতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

০৩) প্রচলিত গদবাধা চাকুরির নিয়ম থেকে বাচতে ফ্রিল্যান্সিং অধিক গুরুত্বপূর্ন।

০৪) ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্যও ফ্রিল্যান্সিং গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।

০৫) অনলাইন দুনিয়ার সকল কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে ফ্রিল্যান্সিং একটি সহজলভ্য প্লাটফর্ম।

০৬) কারো অধীনে কাজ না করার মনমানুষিকতা থাকলে প্রচলিত আত্ব-কর্মসংস্থানের পরে ফ্রিল্যান্সিংই একমাত্র উপায়। অন্যদের চাকুরি দিয়ে আপনার নিজের বস হওয়ার সুযোগ আছে।

০৭) দিন কিংবা রাত যে কোনো সময় কাজ করার ইচ্ছা থাকলে ফ্রিল্যান্সিংই একমাত্র সহজ মাধ্যম।


ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অবশ্যই যেসব দক্ষতা থাকতে হবে?

০১) কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সর্ম্পকে ভালো জ্ঞান রাখা।

০২) আত্মবিশ্বাসের যেকোনো সমস্যাকে সমাধান করা।

০৩) মাইক্রোসফট অফিস, ব্রাউজার, ইমেইলিং সর্ম্পকে কাজ জানা থাকতে হবে।

০৪) বায়ারদের চাওয়া পাওয়া ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা।

০৫) ইংরেজী জানা ও শেখার আগ্রহ থাকা।

০৬) কাজের চাপ নেওয়ার দক্ষতা ও সঠিক সময়ে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার দক্ষতা।

০৭) অনলাইনে যোগাযোগ দক্ষতা ও আলোচনার দক্ষতা থাকতে হবে।

০৮) ফ্রিল্যান্সিং সর্ম্পকিত যতগুলো ওয়েবসাইট, এক্সটেনশন, সফটওয়্যার রয়েছে সবগুলো ভালোভাবে শিখে নেওয়া।

০৯) সময়ের যথাযথ মুল্যায়ন করা।


যেকোনো ক্ষেত্রে সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য ৭টি কাজ করতে হবে।

০১) কঠোর পরিশ্রমের মনোভাব থাকতে হবে। আরাম করা যাবে না।

০২) অনেক কিছু জানা থাকলেও বুঝাতে হবে আপনি কিছুই জানেন না।

০৩) শুধুমাত্র টাকা ইনকামই মূল লক্ষ হলে চলবে না এর সাথে ভালো ইমেজ তৈরী করতে হবে।

০৪) বায়ার বা ক্লায়েন্টের সাথে ভদ্র ও স্মার্টভাবে কথা বলতে হবে।

০৫) নিয়মিত ভালো একজন ফ্রিল্যান্সার থেকে উপদেশ নিয়ে কাজ করুন।

০৬) ইংরেজীতে দক্ষতা বৃদ্ধি করুন।

০৭) অন্য সকল সফল ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল দেখে নিজের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।


লেখাটি সর্ম্পকে আপনার মূল্যবান মতামত আশা করছি। যদি কোনো ভুল পরিলক্ষিত হয় অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। অনলাইনে কি বিষয়ের উপর আর্টিকেল পেতে চান তাও জানাতে ভুলবেন না। পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্যা ধন্যবাদ।


আরো পড়ুন > ডিজিটাল মার্কেটি কি? কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন?



লেখক : মামুন সরকার-ব্লগার ও ইউটিউবার।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন