বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

শুরু করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। করোনা ভাইরাস এযাবৎ কালের ভয়াবহ একটি মরণ ভাইরাস। কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে এই ধরনের মহামারী পৃথিবীর মানুষের জন্য শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ প্রেরণ করে থাকেন। যখন কোনো জাতি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে জুলুম, অত্যাচার, ভ্যাবিচার, হত্যা-খুন, রাহাজানি যেনা সহ সমস্থ অস্লীলতা বেড়ে যায় তখনই আল্লাহ এই শাস্তি দুনিয়ার মানুষের জন্য বাস্থবায়ন করেন।

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ, যেখানে ৯২% এর অধিক মানুষ মুসলমান। এতো সংখ্যাক মানুষের মধ্যে আমিও একজন মুসলিম এটা আমার কাছে গর্বের বিষয়। আমি আমার ধর্মের পক্ষে কথা বলবো, ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চলবো এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। অর্থাৎ সকল ভালো কাজে আল্লাহ ও রাসুলের প্রসংশা করাই হবে আমার ধর্মীয়রীতি। যেমন আমি মুসলমান আমার প্রশংসা হবে আল্লাহ ও রাসুলের। যিনি হিন্দু তার প্রশংসা হবে ইশ্বরের, খ্রিষ্টানের প্রশংসা হবে যিশু মাসিহ বা পরমেশ্বরের।



নিজের ক্ষমতাকে ভালো কাজে, মানুষের উপকারে ব্যয় করুন।



এভাবে করে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যার যার ধর্ম পালন করবে। মুসলমান হিসেবে একজন অমুসলিমকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া যেমন আমার কর্তব্য, একই ভাবে একজন হিন্দু যদি মনে করে তার ধর্মই সেরা তাহলে সেও একজন মুসলমানকে তার ধর্মের দাওয়াত দিতে পারে। উল্লেখিত দুটি ধর্মের মধ্যে যে যার ধর্মকে বাধাহীন ভাবে পালন করাই হলো সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা । এই সেকুলারিজম নীতির যথাযথ বাস্থবায়ন সম্ভব কেবল সকল ধর্মীয় মানুষের সংখ্যার আনুপাতিক হার সমান হওয়া বা সামান্য কিছু কম বেশি হওয়া। যদি কোনো একটি ধর্মের জনসংখ্যা অধিক হারে বেশি হয় তাহলে সেই ধর্মের উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্রীয় নাম হবে মুসলিম রাষ্ট্র বা হিন্দু রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় সংবিধান রচিত হবে আল্লাহর আইনে নাকি মানুষ রচিত আইনে।

এবার আসা যাক মূল কথায়, ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যা ঘরিষ্ট দেশ যার রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। সংবিধানের মূল চারনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। মুসলিম সংখ্যা গরিষ্টার ভিত্তিতে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হলেও রাষ্ট্রের মূল নীতি হবে ধর্মনিরপেক্ষতা। অন্যান্য ধর্মের কাউকে ধর্ম পালনে বাধা না দেওয়া। স্বাধীনতার পর থেকেই আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল সরকারই ধর্মনিরপেক্ষতা সঠিকভাবেই পালন করেছে। কিছু উগ্রীবাদি মানুষ ছাড়া বাংলাদেশে কখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা তেমন একটা হয়নি। যেমনটা আমরা ভারতে দেখতে পাই অহরহ মুসলিম নিধনের মাধ্যমে তাদের কষ্ট্রর হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্রীয় নীতি পালন করতে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিষ্ট্রান সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা যেভাবে বসবাস করছে সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

বাংলাদেশে এমনও কিছু হিন্দু অধ্যুষ্যিত এলাকা রয়েছে যেখানে মুসলমানরা পর্যন্ত তাদের ভয় পায়। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব্বোর্চ পর্যায়ে লক্ষ লক্ষ অমুসলিম তাদের কাজ কর্ম পরিচালিত করছে বাধাহীনভাবে। দেশের প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের। এখানেও আমাদের কোনো বাধা নেই। সে তার যোগ্যতায় সেখানে অধিষ্ঠিত হয়েছে।

আল্লাহর মনোনীত শ্রেষ্ট ধর্ম হলো ইসলাম। প্রত্যেক মুসলমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আল্লাহ ও রাসুলের বাণীকে সঠিক ভাবে পালন করা ও মানুষের মাঝে প্রচার করা। সেই কাজটিই বহুকাল ধরে করে আসছে আমাদের দেশের বরেন্য ইসলামি চিন্তাবিদরা। ইসলামী আইন ও আইনের শাসন প্রতিষ্টায় শত বাধা বিপত্তিকে পিছনে ফেলে অবিরাম ভাবে কাজ করছে আলেম সমাজ। বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় তিনটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, আওয়ামীলিগ ও জামায়াত শিবির। বিএনপি ও জামায়াতের ইসলামিক নীতি এক হলেও আওয়ামীলিগের নীতি সম্পূর্ন বিপরীত। ৯২% এর অধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট থাকা সত্বেও তাদের নীতি সেকুলারিজম। অন্যদিকে জামায়াত শিবিরের নীতি সম্পূর্নভাবে ইসলামিক বা ধর্মীয় পক্ষের নীতি।

একটা সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নই যাদের প্রধান লক্ষ্য, সেখানে আওয়ামীলিগের নীতি হলো মানব রচিত সমাজনীতি, ধর্মীয়নীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন হলো একজন মুসলমান হয়ে কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া যায়? হয় আমাকে আমার ধর্ম ইসলাম মানতে হবে না হয় ধর্মত্যাগ করে অন্য ধর্মকে পালন করতে হবে। এখানে দুই নৌকায় পা দেওয়ার সুযোগ নেই। এই বিষয়টি নিয়েই ধর্মীয় রাজনৈতিক গুলোর সাথে আওয়ামীলিগের বিশাল পার্থক্য। যার ফল স্বরূপ অসংখ্যা হক্কানি আলেম আজ জেলের খাচায় বন্দী। তাদের দোষ কোথায়? মুসলমান হিসেবে দ্বীন প্রচার করা, নিজ ধর্মের মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করা, অন্যান্য অমুসলিমদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া, মুর্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, অন্যায় অবিচার, চুরি-ডাকাতি, জোর জুলুমের বিষয়ে প্রতিবাদ করা ইত্যাদি। এই যদি হয় তাদের অপরাধ দেশ কি কখনো অন্যায় অবিচার থেকে মুক্তি পাবে?

মুসলিম মিল্লাতের জাতির পিতা কে? একদলের উত্তর হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান! আরেকদল বলবে হযরত ইব্রাহিম আ: (সা:)।

মুসলিম রীতি অনুযায়ী সমস্থ প্রশংসা মহান আল্লাহর যাকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুরু করা হয়। এতো সুন্দর একটি কথাতেও যাদের আপত্তি তাদের ব্যাপারে আপনার মতামত কি? নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার এর বিপরীত যেখানে জয় বাংলা-ই মূখ্য বিষয় সেখানে আপনার ভূমিকা কি হওয়া উচিত?

ওয়াজ মাহফিলের জন্য সরকারি অনুমোদন, কোরআনের আলোকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাফসির করলে কট্রর ইসলামপন্থী, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ইত্যাদি। উল্লেখিত বিষয়গুলো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে কতটা মানানসই? নামাজ, রোজা, হ্জ্ব, জাকাত,দান খয়রাত না করে টেন্ডারবাজি, দুর্নীতীতে মগ্ন জাতি নিজের জন্মদাতা পিতামাতার জন্য যতটা না দোয়া করা হয়, তার চেয়ে বেশি একজন নেতার জন্য লোক দেখানো দোয়া করা হয়।, সেটার উদ্দেশ্য কি? যুবসমাজ ধ্বংস করার জন্য যারা দায়ী তারাই থাকে বহাল তবিয়তে। অন্যদিকে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আরেকদল হয় কারাগারের সঙ্গী। এই যদি হয় মুসলমান রাষ্ট্রের নীতি তার চেয়ে বহুগুনে ভালো ছিলো হিন্দুত্ববাদি দেশে সংখ্যালগিষ্ট মুসলিম হয়ে বেচে থাকা।

রাষ্ট্রের একজন প্রধানের মুখ থেকে যখন ইসলাম ও আলেম বিরুধী বক্তব্য আসে স্বাভাবিক ভাবেই সেটা প্রান্তিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলে। মুসলমান হিসেবে লজ্জিত বোধ করি, মন থেকে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করি তাদের মিথ্যা বাণীকে। আমাদের প্রত্যাশা কি? রাষ্ট্রপ্রধান যদি মুসলমান হয় তাহলে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করবো ৫ ওয়াক্ত নামাজের কথা, হ্জ্ব যাকাতের কথা, অন্যায় অত্যাচার, জোর জুলুম, মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকা বরাবরই আমরা হতাশ হই এই ভেবে যে, একজন সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীর লোক যেখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারছে আমরা মুসলমান হয়ে তার কতটুকু অধিকার আদায় করতে পারছি?

দুর্বিত্যায়ন সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে যেখানে বেড়েই চলেছে সেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের এমন আচরণে অসহায়ত্ব অনুধাবন করা ছাড়া আর কি ই বা করার আছে?

পাতি নেতা, ছাতি নেতারা যখন নিজের বাপকে মাটিতে বসিয়ে নিজে বসে বিচারের চেয়ারে, সদ্য গজিয়ে উঠা নেতাদের শক্তির হাতিয়ার হিসেবে এক প্যাকেট সিগারেটের কাছে বিক্রি হয়ে সমাজের অসহায় মানুষের উপর জোর-জুলুম, অত্যাচার চালায় তখন আর বুঝার বাকি থাকে না সমাজের কতটা অধপতন হয়েছে।

আপনার পিছনের ইতিহাস সদ্যভূমিষ্ট হওয়া নবজাতক না জানলেও আপনার উত্থানের গল্প কাহিনী সমাজের মানুষ ভালো করেই জানে। যাই হোক জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো। হাজারো পাপ করেও যে ন্যায়ের পথে ফিরে আসে মানুষ তাকে সাধুবাদ জানাবে। যেভাবেই হোক বিত্তশালী ক্ষমতাবান হয়েছেন ভালো কথা, আমার কথা হলো আপনি সমাজকে কি দিয়েছেন? আপনার দ্বারা মানুষ কতটা কষ্ট পেয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটার হিসেব করেছেন কখনো? দিনের আলোয়, রাতের আধারে কত জঘন্য কাজ করেছেন আপনি আপনার ঘুমন্ত বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন। আল্লাহ যেহেতু ক্ষমাশীল, দয়ালু, মেহেরবান সেহেতু নামাজ, রোজা, হজ্ব যাকাত পালন না করেও মাফ পেতে পারেন। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে আল্লাহ সয়ং বলেছেন কোনো মানুষের হক তার কাছে থেকে মাফ না নিলে এই পাপ আল্লাহ কখনোই মাফ করবেন না।

স্বার্থের কারণে কত মানুষকে আপনি বিপদে ফেলেছেন? কত যুবক আপনি তেলবাজ বানিয়েছেন? যাদের নাক দিয়ে এখনো দুধের গন্ধ বের সেই ছেলেরাই আপনার আকাশচুম্বি প্রশংসা করে? কেনো করে জানেন? আপনি ধরে নিতে পারেন সে কোনো না কোনো অন্যায় কিছু করে আপনাকে দিয়ে পার পাওয়ার চেস্টা করবেন।

সমাজের শিক্ষিত মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক না করে এসব চোর বাটপারদের শেল্টার দিয়ে সমাজ যথা নিজেরও ক্ষতি করছেন বটে। এসব ছেড়ে হকের পথে আসুন, আল্লাহর নিয়ম মানুন, আপনার যথাযোগ্য সম্মান আল্লাহই করবেন। সেকুলারিজম মতবাদ একটি কুফরি মতবাদ। এসব মতবাদ পরকালে ভয়ঙ্কর শাস্তির ইঙ্গিত।

আপনার নিজের সুস্থ বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন যা করেছেন বা করছেন কতটুকু ভালো করেছেন? সমাজ আপনার থেকে কি আশা করে? মানুষকে লোক দেখানো সাহায্যে না করে হৃদয়ের গভীর থেকে অনুধাবন করে নীরবে সমাজের উন্নয়নে ভুমিকা রাখুন। নিজের ক্ষমতাকে ভালো কাজে, মানুষের উপকারে ব্যয় করুন। নেতা হওয়ার জন্য কারো তেল মারার অপেক্ষা করতে হবেনা। আপনি অটোমেটিক নেতা হয়ে যাবেন। সমাজের মানুষ আপনাকেই নেতা হিসেবে বেছে নিবে।

চোখ কান খুলে কোরআন হাদিসের দিকে ধাবিত হন, ভালো করুন, তারপর বুঝবেন এতদিন আপনি সঠিক ছিলেন নাকি বাতিলের পথে ছিলেন। আপনি যে দলেরই হোন না কেনো, মুসলমান হিসেবে আলেমদের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সমাজের মাদক, চুরি-ডাকাতি, জোর জুলুমের বিরুদ্ধে আপনাকে সোচ্চার হতে হবে। ক্ষনস্থায়ী জীবনে এতো টাকা এতো শক্তি, এতো সম্মান দিয়ে কি করবেন? যদি না আল্লাহ খুশি না হন। সমাজের মানুষ আপনার দ্বারা কস্ট পায়? নেতাদের মুখস্থ কথায় বিশ্বাস না করে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন তারা সঠিক বলছে না ভূল বলছে? আজকে আপনি দলে আছেন আপনার কোনো বিপদ আপদ নেই। একবার ভেবে দেখুন যদি ক্ষমতার পরিবর্তন হয় আপনি তথা আপনার পরিবারের কি হবে? ইতিহাস স্বাক্ষী যাদের কথায় সারা বাংলাদেশ চলতো তারাই আজকে জেলের খাচায় বন্দী। আপনার কি মনে হয় তারা আজীবন জেলে থাকবে। আপনাদের ক্ষমতা কি চিরস্থায়ী? ক্ষমতা মানুষের চিরদিন থাকে না। যখন ক্ষমতার পালাবদন হবে তখন বুঝবেন কে আপনার উপকারে আসে। এখন ছাড়া একটা চা খাওয়ার জন্য তেল মারে তারাই আপনাকে আরো বেশি বিপদে ফেলবে। কাজেই এখনও সময় আছে এমন কাজ করুন যেনো ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও সমাজের মানুষের ভালোবাসায় আপনার কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত করুন। আমিন।




লেখক “মামুন সরকার-ব্লগার ও ইউটিউবার।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন