প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সমীকরণ


জীবনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব মিলানোর সঠিক সময় এখনো আসেনি। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির যোগ বিয়োগের সমীকরণে বেলা শেষে প্রাপ্তির পাল্লাটাই ভারি বলে মনে হয় আমার কাছে। চলমান জীবন ধারায় অপ্রাপ্তির বেদনায় জীবনকে স্থবির করার প্রয়াস নতুন কিছু নয়, শত বাধা বিপত্তি, জঞ্জাল,প্রবহমান জীবনের গন্তব্যহীন পথিকের ন্যায় এগিয়ে চলা। ললাটে লেখা নিয়তির বিধানে শতভাগ অবিচল মানবের অস্থিত্ব থাকলেও সংখ্যালগিষ্টের কাতারে হিসাব কষা ছাড়া বিকল্প কোনো পন্থা নেই।



প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সমীকরণ

সতত এগিয়ে চলা মানব সভ্যতায় অন্য মহামানবের ধারে কাছেও নিজের অস্থিত্ব খোজার সাহস দেখাই না। তবে হ্যা, সৃষ্টিকর্তা তার অসীম ক্ষমতায় ১৮০০০ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে যেহেতু মানুষকেই সৃষ্টির সেরা জীব বলেছেন-সেহেতু প্রত্যেকটা মানুষ তার নিজস্ব সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টির সেরা জীব কথাটির শতভাগ প্রমান করার যোগ্যতা অবশ্যই রাখে।


এখন আসা যাক মুলকথায়, ক্ষুদ্র জীবনে কতজন মানুষ  সফলতার শীর্ষে পৌছতে পেরেছে? স্কুল জীবন থেকেই যে যুবক-যুবতীটি তার অক্লান্ত পরিশ্রমে শেষ পর্যন্ত শিক্ষা জীবনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে সেই বলতে পারবে প্রাপ্তির স্বাদ কত মধুর। আবার একই সময়ে স্কুল জীবন থেকে ঝড়ে যাওয়া যুবকটির কথাই ধরুন; পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে জীবনবাচাঁর তাগিদে পথচলার শুরু করে এখন তার অবস্থা কোথায়। হয়তো দিনমজুর, না হয় শ্রমিক যাইহোক না কেনো জীবনে বাচাঁর একটা অবস্থান তৈরী করেছেন। এবার যদি বলি যে লোকটি উচ্চ শিক্ষার স্বাদ নিয়ে এখনো বেকার বসে আছে ভালো একটা চাকরির আশায় তার জীবনটা কিভাবে চলছে?




আমি যদি ভুল বলে না থাকি , সেই উচ্চ শিক্ষিতরা কারো কাছ থেকে এক কাপ চা, একটা সিগারেট খেয়ে প্রতিনিয়ত তাদের দিন পার করছে। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সমীকরনের হিসাব কষলে কাকে আপনি সুখী বলবেন। উভয় ব্যক্তির জীবনের পূর্নতা অপূর্নতার হিসাব যার যার প্রান্তে সে  সুখি-দু:খি। একজন উচ্চ শিক্ষার তৃপ্তির ডেকুর তুলে শান্তি পায়, অন্যদিকে বেকারের কি যন্ত্রনা তাও তাকেই সহ্য করতে হয়।
অন্যদিকে পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে দিনমজুর হয়ে অন্তত দুবেলা দুমোঠো খাবারের চিন্তা করতে হয় না। কারন এটাই তার পেশা। কিন্তু দিনমজুর কখনোই উচ্চ শিক্ষার তকমা নিজের গায়ে কখনোই লাগাতে পারবেন না। বেলা শেষে দুজনই নিজ নিজ প্রান্তে সুখী দুখী।

এরকম প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব কষলে জীবনে কোনো ব্যাক্তিই সুখী নয়। কারো একটি ছেলে একটি মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার, অন্যকারো দুটি বা তিনটিই মেয়ে। ছেলের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে সে কিন্তু প্রকৃতি পক্ষেই সৌভাগ্যবান আল্লাহ-রাসুলের বিধান মোতাবেক।
কারো ক্ষেত্রে ছেলেও নেই মেয়েও নেই কিন্তু টাকার পাহাড়ের মালিক, লক্ষ বেকার ও দিন মজুরের চাকুরি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এতো কিছুরই পরও কি তাকে সুখি বলা যাবে? অর্থের প্রাপ্তির হিসাবে তার চেয়ে সফল হয়তো খুব কমই আছে। পক্ষান্তরে ছেলে মেয়ের বাবা হওয়ার স্বাদ নেওয়ার অতৃপ্তি, দু:খ হয়তো তার চেয়ে বেশি অন্যকেউ অনুভব করবেনা।

প্রবহমান জীবন ধারায় এমন হাজারো দৃষ্টান্তের প্রতিনিয়তই সাক্ষি হচ্ছি আমরা। ভাগ্যের নির্মম সত্যকে যারা মেনে নিয়েছে তারা হয়তো বুক ভরে দীর্ঘস্বাস নিয়েই সন্তুষ্টি থাকে। পক্ষান্তরে ভাগ্যে লেখা সত্যকে যারা মেনে নিতে পারেনি তারা হতাশার সাগরে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছে সত্যকে অতিক্রম করার। বেলা শেষে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাবে কেউ কখনো সুখী নয়।


পরিশেষে প্রাপ্তির হিসাবটাকে নিজের মনে করে অপ্রাপ্তি গুলোকে অপরের অধীনে ছেড়ে দেওয়াকেই আমি যুক্তি সংগত বলে মনে করি। প্রাপ্তিটা যেহেতু জীবনকে কিছু্টা হলেও উপভোগ্য করেছে সেহেতু সামান্য প্রাপ্তিতেই আমি সুখি। যেহেতু অপ্রাপ্তি গুলো কখনোই আমার অধীনে ছিলোনা সেহেতু অপ্রাপ্তি নামক শব্দটি আমার ডিকশনারিতে রাখতে চাই না। ধন্যবাদ।






লেখক : মামুন সরকার

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন