পুরাতন কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর গোপন কৌশল।

আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটার যে কনফিগারেশনেরই হোক না কেনো সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে কম্পিউটারকে ব্যবহার করতে পারলে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়াটা কঠিন কোনো ব্যাপার নয়।

কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর কৌশল।


আমরা সব সময়ই প্রত্যাশা করি আমাদের কম্পিউটারটি যেনো ভালো পারফরমেন্স দেয় পারফরমেন্স যেন সবসময় থাকে নতুনের মতো!

অথচ আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কখনোই বিশ্লেষণ করতে চাই না, বিষয়টা হলো একই কনফিগারেশনের কম্পিউটার নতুন অবস্থায় ভালো মানের পারফরমেন্স দিলেও, কেনো ধীরে ধীরে পারফরম্যান্স স্লো হয়ে যায়? নতুন অবস্থায় একটি কম্পিউটার যেমন দ্রুত কাজ করে ঠিক কিছুদিনের মাঝেই পিসি আর আগের মতো ফাস্ট থাকে না। কম্পিউটারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা জানতে পারলে কম্পিউটারের গতি অনেকাংশেই বৃদ্ধি করা সম্ভব।  অন/অফ করার সময় স্লো করা, ফাইল এবং ফোল্ডার খোলা ও বন্ধ করা সহ ইন্টারনেট ব্রাউজিং সবকিছুতেই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সময় নিতে শুরু করে আমাদের  কম্পিউটার।
একসময় অধৈর্য হয়ে মেকানিকের কাছে গিয়ে বাড়তি র‍্যাম যোগ করা বা বাজার থেকে উইন্ডোজের সিডি কিনে এনে আবার অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে কিছুদিন শান্তিতে থাকলেও মাস ঘুরাতে না ঘুরাতেই আবার সেই একই সমস্যা। 
কিন্তু, আপনি চাইলে মেকানিকের কাছে না গিয়ে বা উইন্ডোজ বার বার রিইন্সটল না করেও ঘরে বসেই ছোটখাটো কিছু টিপস জেনে পিসিকে সবসময় নতুনের মতো ফাস্ট রাখতে পারেন।


কম্পিউটারের গতি বাড়াতে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিষয়গুলো-


➡️ অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম রিমোভ করুনঃ


কম্পিউটারে যখনই কোনো সফটওয়্যার বা ড্রাইবার ইন্সটল করা হয় তখন প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামের সাথে কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামও ইন্সটল হয়ে থাকে। 
যা আপনার পিসির পারফরমেন্স কমিয়ে দিতে পারে। তাই অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামগুলো রিমোভ করে দিন। এজন্য আপনার পিসির Start মেনু হতে control প্যানেলে যান। সেখান থেকে Programs and Features এ গিয়ে অনাকাংখিত প্রোগ্রামগুলো রিমুভ করেন। Uninstall a programme এ ক্লিক করে।

🖊️ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মনে করুন আপনি মাইক্রোসফট অফিসের সফটওয়্যারটি ইন্সটল করলেন, এখন আপনি লক্ষ করে দেখবেন একটিমাত্র সফটওয়্যার ইন্সটল করেছেন ঠিকই কিন্তু সেখানে কিছু  অপ্রয়োজনীয় ফিচারও ইন্সটল হয়ে যায়। যেমন, মাইক্রোসফট অফিসের একটি সফটওয়্যারে অনেকগুলো ফিচার থাকে, এরমধ্যে প্রয়োজনীয় হলো এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, আউটলুক, এক্সেস,পাবলিশার। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ফিচার ডিফল্ট ভাবে ইন্সটল হয়ে যায়। সেগুলোকে রিমুভ করে দিন। (যদিও এখনকার লেটেস্ট ভারশনে অপ্রয়োনীয় কিছু থাকে না, এটা বিশেষ করে মাইক্রোসফট ভিজুয়াল স্টুডিওর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, একটি ইন্সটল করলে অনেকগুলো ফিচার চলে আসে)


➡️ অপ্রয়োজনীয় জাঙ্ক ফাইল দূর করেনঃ


কম্পিউটার চালানোর সময় নানা রকম অনেক অপ্রইয়োজনীয় ফাইল নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়, যা আমাদের পিসির গতি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। এই অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো ডিলিট করতে Run এ গিয়ে prefetch লিখে এন্টার চাপুন এবং সবগুলো ফাইল রিমুভ করুন। এর পর %temp% লিখে এন্টার চাপুন এবং সকল ফাইল ডিলিট করুন। এই কাজগুলো অটোমেটিক ক্লিকে করতে নিচের কোডটুকু একটা text ফাইলে লিখে সেভ করুন। এরপর ফাইলের নাম পরিবর্তন করে junk_remover.bat নামে সেভ করুন। এবার ডাবল ক্লিক করলেই অপ্রয়োজনীয় জাঙ্ক ফাইল সমূহ রিমুভ হয়ে যাবে। কোডঃ del C:\Windows\Prefetch\*.* /Q Rundll32.exe advapi32.dll,ProcessIdleTasks

➡️ নিয়মিত Disk Defragmenter করুনঃ


কিছুদিন পর পর হার্ডডিস্ক ডিফ্রেগমেন্ট করুন। এতে করে আপনার হার্ডডিস্কের গতি বাড়বে। হার্ডডিস্ক ডিফ্রেগমেন্ট করতে My computer হতে properties এ যান। সেখান হতে Performance Information and Tools এ যান এবং সর্বশেষে Advanced Tools হতে Open Disk Defragmenter এ যান। আর সরাসরি যেতে চাইলে Search বার এ Disk Defragmenter লিখে এন্টার চাপুন।

➡️ Disk Cleanup করে হার্ডডিস্কের অপ্রয়োজনীয় ফাইল দূর করুনঃ


স্টার্ট মেনুতে গিয়ে Disk Cleanup লিখে এন্টার চাপুন। এরপর যে ড্রাইভ পরিস্কার করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন। কিন্তু সাবধান ডিলিট করবেন না কিন্তু।


➡️ পিসিকে ভাইরাস মুক্ত রাখুনঃ


ভাইরাস আপনার পুরো পিসি ধ্বংস করে দিতে পারে। সেই সাথে আপনার প্রয়োজনীয় সব ফাইলও শেষ করে দিতে পারে। এর জন্য ভালমানের এন্টি ভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আমি সাজেস্ট করবো Microsoft Security Essential. তথাকথিত এন্টিভাইরাসের চেয়ে এটা অনেক বেশি পরিমাণ ভাইরাস ডিটেক্ট করতে পারে। উইন্ডোজ ৮ এবং উইন্ডোজ ৮.১ এর সাথে ডিফল্টভাবেই দেয়া থাকে। উইন্ডোজ ১০ ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে ইন্সটল করে নিতে হবে।  আর মালওয়্যার, স্পাইওয়ার এবং শর্টকাট ভাইরাস হতে পিসিকে মুক্ত রেখে ব্যবহার করতে পারেন USB Disk Security. কারন বেশির ভাগ ভাইরাস ছড়ায় USB Pen Drive এর মাধ্যমে।

➡️ Browsing History এবং Cooky ক্লিয়ার করুনঃ


ব্রাউজিং হিস্টোরি এবং কুকিসমূহ র‍্যামে জমা হয়ে র‍্যামের গতি কমিয়ে দিতে পারে। তাই প্রতিদিন ব্রাউজিং হিস্টোরি এবং কুকিসমূহ ডিলিট করুন। এজন্য যেকোন ব্রাউজার খুলে Ctrl+H চেপে সবকিছু ডিলিট করে দিন। 

➡️ অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম স্টার্টআপ দূর করুনঃ 


পিসি চালু হলে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম চালু হয়। সেই প্রোগ্রামগুলোর কারণে পিসি স্টার্ট হতে অনেক সময় নেয় এবং র‍্যামের জায়গা দখল করে। অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম অটোস্টার্ট বন্ধ করতে Run এ গিয়ে লিখুন msconfig লিখে এন্টার চাপুন এবং যে সকল প্রোগ্রাম আপনার দরকার নেই সেগুলো Disable করে দিন।

➡️ কম্পিউটারের পারফরমেন্স সেটিং করাঃ


পিসির পারফরমেন্স বাড়াতে আরেকটি ভালো উপায় রয়েছে। তা হচ্ছে Performance Option. স্টার্ট মেনুতে গিয়ে লিখে এন্টার দিলে উইন্ডো ওপেন হবে। সেখান থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পারফরমেন্স নির্বাচিত করে দিন। চাইলে নিজের মত কাস্টমাইজ করতে পারেন। এখানে তিনটি অপশন থাকে একটি হলো

➡ বেস্ট পারফরমেন্স মোড,✅✅✅
➡ কাস্টমাইজ 
➡ বেস্ট লুকিং


➡️ নিয়মিত ড্রাইভ রিফ্রেশ করুনঃ


পিসিকে সচল রাখতে নিয়মিত ড্রাইভ রিফ্রেশ করুন। এর জন্য নিচের কোডটুকু text ফাইলে লিখে Refresg.bat নামে সেভ করুন। প্রতিদিন এটাতে ক্লিক করে ড্রাইভকে সচল রাখুন।


➡️ থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করুনঃ


পিসির গতি বৃদ্ধি করার জন্য থার্ড পার্টি সফটওয়্যার হিসেবে CCleaner একটি চমৎকার সফটওয়্যার। এক ক্লিকেই সব ফিনিশ!!

➡️ দরকারি/অদরকারি সফটওয়্যার বাছাইঃ

অদরকারি সফটওয়্যার দিয়ে পিসি’র মেমোরি ফুল করলে কম্পিউটার স্লো হবেই, তাই নিয়মিত কাজে লাগে না এমন সফটওয়্যার কম্পিউটারে ইনস্টল না করা উচিত। সাধারণত, দোকান থেকে নতুন ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কিনে আনার সময় বেশকিছু সফটওয়্যার প্রি-ইনস্টলড করে দেয়া হয়। এছাড়াও, অনেকেই বন্ধুর কম্পিউটার বা হাতের কাছে সফটওয়্যারের সিডি পেলে সেখান থেকে কিছু সফটওয়্যার এনে নিজের কম্পিউটারে সেট করে নেয় – যা একেবারেই অনুচিত। নিজের সংগ্রহে রাখতে চাইলে ইনস্টল না করেও কোনো একটি ড্রাইভে তা কপি করে রাখা যায়। পরে কখনো দরকার হলে সেখান থেকে নিয়ে ইনস্টল করে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও, অনেকের কম্পিউটারে একই কাজের বা ধরণের সফটওয়্যার একাধিক করে থাকে, যেমন ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, মজিলা এবং ক্রোম আবার ছবি এডিট করার জন্য ফটোশপ আছে, আবার পিকাসাও ইনস্টলড করা; কেউ কেউ একই কম্পিউটারে দুটি বা তিনটি অ্যান্টিভাইরাস পর্যন্ত ব্যবহার করেন! এটি কম্পিউটার স্লো হওয়ার পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ। একটি কাজের জন্য কম্পিউটারে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করুন, বাড়তি কাজের জন্য অন্য কোনো অ্যাপ্লিকেশন লাগলে দরকারের সময় ইনস্টল করে ব্যবহার করুন ও কাজশেষে তা আবার আনইনস্টল করে ফেলুন। আশা করি কম্পিউটারের গতি অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে।

➡️ ছবি, মুভি বা ফাইল সংরক্ষণের জায়গা কম্পিউটারে না রাখাই ভালো- 


শুনে অন্যরকম মনে হলেও এটাই সত্যি যে অফিসের কম্পিউটার বা নিত্য ব্যবহার্য কাজের কম্পিউটার অতীতের ছবি, এইচডি মুভি বা পারিবারিক হিসাব-নিকাশের ফাইল সংরক্ষণের জায়গা না! এসবের জন্য আলাদা তথা পোর্টেবল ইউএসবি হার্ডডিস্ক ব্যবহার করুন।

➡️ স্টার্টআপ অপটিমাইজেশন করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিজেবল -


স্টার্টআপ হচ্ছে একটি কম্পিউটার চালু হওয়ার সময় কী কী সফটওয়্যার নিজে থেকে চালু হয়ে যাবে – তা নির্দিষ্ট করে দেয়া। প্রায় সব কম্পিউটারেই অধিকাংশ সফটওয়্যার পিসি স্টার্ট হওয়ার সময় চালু হয় বলে অন/অফ টাইম অনেক বেশি লাগে। এমন যদি হয় আপনার কম্পিউটারে বিজয় এবং অভ্র দুটোই আছে এবং কম্পিউটার চালু হওয়ার সময় একই সঙ্গে দুটোই চালু হয়ে যায় – সেক্ষেত্রে এখান থেকে যেকোনো একটির অটো-স্টার্ট চালু রেখে অন্যটি ডিজেবল করে দিতে পারেন। আপনার কম্পিউটারের কোন কোন সফটওয়্যার অটো-স্টার্ট নেয় তা দেখতে এবং অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের স্টার্টআপ ডিজেবল করে দিতে কী-বোর্ড থেকে Ctrl+R চেপে msconfig লিখে Enter চাপুন। এবার Startup সিলেক্ট করে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডিজেবল করে দিন। তারপর দেখুন কম্পিউটারের গতি কাকে বলে!!


লেখক- মামুন সরকার
ব্লগার ও ইউটিউবার।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন