পৃথিবী সৃস্টির পর থেকেই মানুষের মধ্যে ধনী গরিবের বৈষম্য চলেই আসছে। শুন্য থেকে কোটিপতি, কোটিপতি থেকে শুন্য। রাজা থেকে প্রজা, আবার প্রজা থেকে রাজা। জুলুমবাজ, অত্যাচারি থেকে নিঃস্ব, নিঃস্ব থেকে প্রতিবাদি।
মহাকাল ধরে কোন কিছুরই অস্তিত্ব টেকেনি কালের পরিক্রমায়। ব্রিটিশরা শাসন করেনি এমন দেশ খুব কমই আছে। স্বাধীনতাকামী জাতির প্রতিবাদের মুখে আজ তাদের শাসনের অস্তিত্ব বিলীন। ভারত উপমহাদেশ থেকে পাকিস্তান-ভারত, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ। তারপর নিজেদের মধ্যে বহু বিভাজন।

সমাজের উচ্চবর্গের মধ্যে এখনও ব্রিটিশ শাসনের, পাক শাসনের  প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান। কিছু হলেই সমাজ থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি। মেরে ফেলার হুমকি আরও কত কি! তারাই সমাজে সর্প হইয়া ধংশন করে ওঝা হইয়া ঝারে। হাকিম হইয়া হুকুম করে পুলিশ হইয়া ধরে।
তাদের বেলায় সাত খুন মাফ, আমাদের বেলায় লঘু পাপে গুরুদন্ড। বয়সের ভারে মৃত্যু যাদের দরজায় কড়া নাড়ছে তারাও নেশায় আসক্ত, ধান্ধা তাদের নিত্যদিনের  যোজগার,  উচুদের উপরে ওঠার মই, নিচুদের গর্তে ফেলার ফাদ।

তাদের ব্রিটিশ কায়দার দুঃশাসনে,  অত্যাচারে অনেকে হয়েছে দেশান্তর, অনেকে দেশান্তরের যাত্রী, কারোও আবার নিজ মাতৃভূমিতে যুদ্ধ করে প্রত্যাবর্তন। যারা মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেছে তাদের ঘরে হয়তো কলম ধরার হাতিয়ার জন্মেছে। প্রতিবাদের ভাষা শিখেছে, এটাও তাদের দুঃচিন্তার কারন। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে সমাজে টিকে থাকার আপ্রান চেস্টা। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের চিত্র  বদলানোর যোদ্ধা। 


ধনী গরিবের বৈষম্য


অধিকাংশ মানুষই সমাজে এখনো নিজেদের ভিত্তি করতে পারেনি। কেউ হয়তো শুরু করেছে কিন্তু পারি দিতে হবে হিমালয় পর্বত। তবুও আশাবাদি এই কারনে যে, ব্রিটিশরা সারা বিশ্ব শাসন করেছে এখন তারা শাসনের অস্থিত্বে বিলীন। আমাদের এই শোষনের সমাজটাও একদিন ব্রিটিশ মুক্ত হবে। মানুষ তার স্বাধীনতা পাবে। এক সময় যে কবিতার কোনো মর্ম বুঝতাম না, তাই এখন শক্তি যোগানোর হাতিয়ার,  ''আমি কি আর কাউ ডরাই, ভাঙ্গতে পারি লোহার কড়াই'''
মহান আল্লাহ তাদের মৃত্যুর আগে হেদায়েত করুক। কেননা নিপীড়নের পক্ষে কিছু কিছু সময় তারাই ওঝা হয়েছে। মঙ্গলজনক কাজও করেছে। তবে অমঙ্গলকর কাজই বেশি। ওই যে বললাম না সাপ-ওঝা/হাকিম- পুলিশের কথা।

সমাজের নীতি নির্ধারকরাই যেখানে দুর্নীতিতে জড়িত সেখানে আমার মতো অধমের এর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে জলে থেকে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করাই বলতে হবে। প্রাপ্ত বয়সের তকমা লাগার আগেই সমাজের  অদ্ভুদ কিছু বিচারের সাক্ষী তখন থেকেই হয়েছিলাম। সেটাও সয়ং আমার পরিবারের সাথেই। কিছুই করার ছিলোনা তখন, কারন আমি যে সবেমাত্র সাদা কালো শিখার ছাত্র ছিলাম। সময়ের পরিক্রমায় মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন হয়তো স্পস্টই বলতে পারি কোনটা সাদা, কোনটা কালা।
সমাজের প্রত্যেকটা রন্দ্রে রন্দ্রে অবিচারের আখরা, ধনীদের ব্রিটিশ স্টাইলে সমাজ শাসন, গরিবের ক্ষুদার আর্তনাদ, ভুক্তভোগীর বিচার প্রার্থী সময়ের ব্যবধানে সবকিছুরই রাজসাক্ষী আমার আমি। কিছুই করার সামর্থ নেই এই অধমের। শুধু অপলক দেখেই আত্বার তৃপ্তি মেটাই। ইস আমাকে যদি আল্লাহ শক্তি সামর্থবান করতেন , দেখতাম সমাজের এই অবিচারের শ্রোতে বিপরীত হতে পারি কিনা?

এই সমাজে সত্য কথা বলে যে স্থির থাকা যাবেনা এটা আমি ভালো করেই বুঝি, কিন্তু এভাবে আর কতদিন? অত্যাচারী, জুলুমবাজরা দিন থেকে দিন তাদের আদিপত্যের শিখর মজবুত করছে, অন্যদিকে  নিপীড়ন সহ্যকারিরা তাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে দেশান্তর হওয়ার রাস্তা খুজছে। অনেক অভাগা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে পরবাসি, কেউ হয়েছে পরকালবাসি।
হাজারো এমন মানবতাবিরুধী করুন কাহিনী আমাদের সমাজের কোথাও না কোথাও এখনো বিদ্যমান। আবহমান জীবন ধারায় শুধু ধনী থেকে আরো ধনী, গরিব থেকে আরো গরিব এই দৃশ্যটিই যেনো সমাজের মধ্যে বিরাজ করছে মহাকাল ধরে।

এর থেকে কবে পরিত্রান পাব, কবে আমাদের সমাজটা মানুষের কাতারে শামিল হবে? ধনী-গরিবের ব্যবধানের কথা বাদ দিলাম; আমি আমারটাই অকপটে শিকার করে নিলাম যে, আমি গরিব, আমি নিস্ব, আমি সমাজের পরিত্যাক্ত আবর্জনা এতে কি কারো আপত্তি আছে? আমি এই দুর্বিত্বের সমাজে কিছুই চাইনা। আমাকে আমার মতো থাকতে দেও, আমাকে আমার মতো বাচতে দেও। ক্ষুদার নির্মম জ্বালা আমাকেই সহ্য করতে দেও, হয়তো আপনার কোনো আপত্তি নেই। আপত্তিটা তাদেরই যারা আরো ধনী হতে চায়, আরো বেশি জুলুমবাজ হতে চায়, আরো বেশি অত্যাচারি হতে চায়। এ কারনেই হতে চায় তাদের অন্যযোগারের পন্থা যে শুধুই গরিবের সম্পদের দিকে।

যে করেই হোক অত্যাচারির ভুমিকায় তাদের আদিপত্যকে টিকিয়ে রাখতেই হবে। বোবার মতো মুখ বুঝে সহ্য করে আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়ার রাস্তাটাই শুধু মসৃন।
শত অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে এমন কেউ কি আদৌ আমাদের সমাজে তৈরী হবেনা। কেউ কেউ কিছুটা শুরু করতে চাইলেও অবচেতনে সেই মিশে গেছে তাদের দলে। এভাবেই কি চলতে থাকবে আমাদের সমাজটা। আল্লাহর বিচারের উপরেই ছেড়ে দিলাম সমাজের এই কিটদের দায়িত্ব। ধন্যবাদ।




লেখক : মামুন সরকার

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন