ফ্রিল্যান্সিং কি?

একটা সময় ছিলো মানুষ সামান্য হাজার টাকার বেতনের চাকুরির জন্য একদেশ থেকে অন্যদেশে, একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতো। তারপর কারো অধীনে গিয়ে কাজ করতো শত শর্তের বেড়াজালে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে কিছু মানুষের দুরদর্শিতায় মানুষের জীবযাত্রাকে করেছে সহজ থেকে আরো সহজ। এখন আর মানুষ চাকুরির জন্য শত মাইল দুরে কোথাও যাওয়ার চিন্তা করেনা। তারা চিন্তা করে ঘরে বসে কিভাবে ইনকাম করা যায়। আর তাকেই বলে ফিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সিং হলো একটি মুক্ত ও স্বাধীন পেশা। গতানুগতিক কোনো প্রাতিষ্ঠানের অধীনে নিয়ম মাফিক কাজ না করে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কাজ সম্পন্ন করা হয় তাকেই বলে ফ্রিল্যানিং। আর এসব কাজ যে করে তাকে বলে ফ্রিল্যান্সার। বর্তমান ইন্টারনেটের যোগে মানুষ দিন শারিরিক পরিশ্রম বাদ দিয়ে মেধাশ্রমের দিকেই বেশি ধাবিত হচ্ছে।  প্রযুক্তি যত উন্নত হচেছ মানুষ তত স্মাট অলস হচেছ। আপনি যদি ফিল্যান্সিং শুরু করতে চান তাহলে দুইভাবে করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং কয় ধরনের ?

ফ্রিল্যান্সিং দুই ভাবে করতে পারবেন।
1. সেলার (Seller) 
আপনার কাজ যদি টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে দিয়ে করিয়ে নেন তাহলে আপনি হবেন বায়ার। 
2. বায়ার (Buyer) 
আর আপনি যদি অন্যজনের কাজ টাকার বিনিময়ে করে দেন তাহলে আপনি হবেন সেলার। 

আপনি ইচ্ছা করলে দুটি একসাথেও করতে পারেন। আপনি যে কাজে দক্ষ তার মাধ্যমে আপনি কাজ করে ইনকাম করবেন। যে কাজে আপনি অদক্ষ সে কাজটি অন্যজনকে দিয়ে করিয়ে নিবেন। ফ্রিল্যান্সিং করে আপনিও আয় করতে পারেন লক্ষ লক্ষ টাকা । আমার মতো অথবা আপনার মতো অলসদের জন্যই  ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে একমাত্র সম্ভাবনাময় আরনিং সোস । অনলাইন দুনিয়ায় ভবিষ্যৎতের সম্ভাবনাময় পেশা ও ইনকাম সোর্স হিসেবে ফিল্যান্সিং হতে পারে নাম্বার ওয়ান। আপনি যদি মোটামুটি ইংলিশে কথা বলতে পারেন ও পাশাপাশি লিখতে পারেন তাহলে আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে  ফ্রিল্যান্সিংকেই বেছে নেওয়া উচিত। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্বে তার কিছু ধারনা থাকা উচিত। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে ফিল্যান্সিং শুরু করবেন।

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? ফ্রিল্যান্সিংয়ে কিভাবে ইনকাম করে।

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ?

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এই একটি কমন প্রশ্ন সকলেরই মধ্যেই ঘুরপাক খায়। আমি বলি ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এই প্রশ্নটি করার আগে ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ কি তা বুঝার চেস্টা করুন। আমি যদি 
আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর বাংলা অর্থ দিয়ে বলি তাহলে ফ্রিল্যান্সিং এর বাংলা অর্থ ‍মুক্ত পেশা অথবা স্বাধীন পেশা যেটা আমি আর্টিকেলের শুরুতেই বলেছি। যাইহোক যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্তপেশা সেহেতু আপনার কাজের অভিজ্ঞতার উপর যে কোনো কাজের উপরই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। মনে করুন আপনি ভিডিও এডিটিং ভালো জানেন অথবা মাইক্রোসফট এক্সেলে আপনি এক্সপার্ট তাহলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার চিন্তা করতে পারেন।

মূল প্রশ্নে আসা যাক, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবেন? ফ্রিল্যান্সিং শিখার জন্য আপনাকে একটা পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা ‍গুলো হবে এরকম, প্রথমত আপনার একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কানেকশান থাকার প্রয়োজন। যদি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট কানেকশান ইতিমধ্যে থেকে থাকে তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কাজের উপর ফ্রিল্যান্সিং করতে আপনি আগ্রহী। যদি ভিডিও এডিটিং এর উপর আপনার আগ্রহ থাকে। তাহলে আপনার কম্পিউটারে একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ইন্সটল করে ধীরে ধীরে ভিডিও এডিটিং শিখে ফেলুন। আপনি চাইলে মোবাইলেও ভিডিও এডিটিং শিখতে পারেন। যখন আপনি ভিডিও এডিটিং শিখে ফেলার পর, এবার সিদ্বান্ত কোন মার্কেটপ্লেসে করবেন। কাজ করার জন্য শত শত মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেখানে আপনি কাজ করতে পারেন।


মনে করুন আপনি ফাইবারে কাজ করতে ইচ্ছুক তাহলে আপনার কম্পিউটারের ব্রাউজার থেকে www.fiverr.com লিখে সার্চ করুন। তারপর সেখানে একটি একাউন্ট খুলুন বায়ার অথবা সেলার হিসেবে, আপনার আপনার ইমেইল, এড্রেস, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি যা কিছু প্রয়োজন সব কিছু দিয়ে। একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে ফাইবারে একটি গিগ তৈরী করুন। গিগে আপনি উল্লেখ করে দিন আপনি ভিডিও এডিটিং বিষয়ে অভিজ্ঞ কেউ যদি আপনাকে দিয়ে কাজ করাতে চায় তাহলে আপনি এতো টাকার বিনিময়ে করে দিবেন। ব্যস গিগ সাবমিট করা হয়ে গেলে আপনাকে শুধু নজর রাখতে হবে কোনো বায়ার আপনাকে মেসেস দিয়েছে কিনা। যদি কেউ আপনাকে মেসেস দেয় কাজের ব্যাপারে তাদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ বা মেসেস রিপ্লাই দেওয়ার চেস্টা করুন। বায়ার আপনার কাজে সন্তুষ্ট হলে আপনাকে তার কাজটি করে দেওয়ার জন্য বলবে। এবং বায়ারের চাহিদা মোতাবেক যদি কাজটি করে দিতে পারেন বায়ার আপনার পারিশ্রমিক পরিশোধ করবে।

ফ্রিল্যান্সিং শিখার জন্য উপরের পদ্ধতিটি শুধুমাত্র আপনার নিজস্ব চেস্টায় শিখতে হবে। দ্বিতীয় উপায় হলো ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ইউটিউবে শত শত চ্যানেল রয়েছে যারা নিত্য নতুন ভিডিও বানিয়ে থাকে ফ্রিল্যান্সিং সর্ম্পকে। আপনি আপনার পছন্দের কয়েকটি চ্যানেল সাবসক্রাইব করে বেল আইকন বাজিয়ে রাখতে পারেন। ইউটিউব ছাড়াও অনেক ব্লগার আছে তাদের ব্লগে শুধু ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে লেখা লেখি করে আপনি চাইলে তাদের ব্লগটিও নোট করে রাখতে পারেন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্লগ সাইট ব্রাউজ করে যে কোনো কিছু জেনে নিবেন।

কিভাবে ফিল্যান্সিং শুরু করবেন ?

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে প্রথমে কোনো না কোনো বিষয়ের উপর আপনাকে দক্ষ হতে হবে। তারপর আপনার দক্ষতা অনুযায়ী নিদিষ্ট কোনো একটি সাইটে আপনার দক্ষতার একটি প্রোফাইল তৈরী করতে হবে। প্রোফাইল তৈরী হয়ে গেলে সেটিকে পাবলিশ করতে হবে। মনে করুন আপনি সাইট হিসেবে ফাইবারে কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন, তারপর আপনি যে কাজ জানেন, মনে করুন আপনি ফেসবুক মার্কেটিং করতে জানেন অথবা ইমেইল আইডি বানাতে জানেন, তাহলে আপনাকে ফাইবারে একটি গিগ তৈরী করে সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা বর্ননা করতে হবে। আপনি এভাবে বর্ননা করতে পারেন ” হ্যালো ডিয়ার বায়ার/অথবা ডিয়ার স্যার আপনার কাছে যেটি ভালো মনে হবে এটি লিখতে পারেন। আমি আপনার বিজনেসকে/পন্যকে আমার ফেসবুকের মাধ্যমে সহজে আপনার কাঙ্খিত ক্রেতার কাছে পৌছে দিব। আমার ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আশা করি আপনার পণ্যর বিক্রি বহুগুন বেড়ে যাবে। 

আমি এখানে বাংলায় শুধু আপনাদের বুঝানোর জন্য লিখলাম। ফাইবার অথবা অন্যান্য সাইটে আপনাকে ইংলিশে এভাবে লিখতে হবে। মনে রাখবেন তৈরী গিগটি যেন অন্য কারো গিগের সাথে মিলে না যায়। তাহলে আপনি কপিরাইট পেতে পারেন। সব সময় অন্যদের চেয়ে ভিন্ন গিগ তৈরী করার চেস্টা করবেন।


ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?


কোন সাইটে ফ্রিল্যান্সিং করবেন ?

ফিল্যান্সিং শুরু করতে প্রথমে আপনাকে কাজের ক্ষেত্র বা সাইট খুজে বের করতে হবে। ফিল্যান্সিং শুরু করতে প্রথমে যে সমস্যাটি হয় সেটি হলো কোন সাইট দিয়ে ফিল্যান্সিং শুরু করবেন। অনলাইন জগতে শতশত ফিল্যান্সিং সাইট আছে, সব গুলোতেই আপনি কাজ করতে পারবেন। তাহলে প্রশ্ন থাকে তাহলে সবাই কেনো ফাইবার, ফিল্যান্সার, আপওয়ার্ক এর কথা বলে। শত শত সাইটের মধ্যে এরকম কয়েকটি সাইট আছে যেগুলোতো বিশ্বের সকল ফিল্যান্সাররা এখানে কাজ করে এবং এসব সাইট গুলোতে কেউ প্রতারণা করেনা। নিচে  উল্লেখিত কয়েকটি সাইট থেকে আপনি ইচ্ছা করলে কাজ শুরু করতে পারেন। আমি সাজেষ্ট করবো যেহেতু আপনি নতুন হিসেবে শুরু করবেন তাহলে ফাইবার দিয়েই শুরু করতে পারেন। অন্যান্য সাইটের তুলনায় ফাইবারে একাউন্ট ভ্যারিফাই করা খুব সহজ। এবং তাদের পেমেন্ট পদ্ধতিও অনেক সহজ।

  1. Fiveer

  1. Upwork
  1. Toptal
  1. Freelancer
  1. Craigslist
  1. Guru
  1. 99designs



কি কি কাজ জানা লাগবে?

ফ্রিল্যান্সিং জগতে আপনি যত বেশি কাজ জানবেন ততই আপনার চাহিদা বাড়বে। ঘরে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায় এমন যেকোনো কাজ আপনি শিখতে পারেন। যেমন শুধু মাইক্রোসফট অফিসের এক্সেল, ওয়ার্ড,আউটলুক, পাওয়ার পয়েন্ট শিখে সেই অভিজ্ঞতা গুলো ফাইবার অথবা ফ্রিল্যান্সার সাইটে গিগ বানিয়ে বর্ননা করে রাখুন। এবং এসব কাজের জন্য আপনি কত টাকা নেবেন সব কিছু গিগে উল্লেখ করে দিন। ফাইবার সাইটে যারা ভিজিট করবে তাদের নির্দিষ্ট কাজের সন্ধানে তখন যদি আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও কাজের বাজেট তাদের পছন্দ হয় তাহলে বায়ার আপনার সাথে কন্টাক্ট করে আপনাকে কাজটি দিবে। ফাইবার সাইটে যদি না গিয়ে থাকেন তাহলে এখান Fiverr থেকে ভিজিট করে আসুন। এখানে হাজারো কাজ আছে যার মধ্যে থেকে যেকোনো একটি কাজের উপরও যদি শুরু করেন ধীরে ধীরে আপনিও একদিন ফ্রিল্যান্সে এক্সপার্ট হয়ে যাবেন।কাজতো আপনার মন মতোই শিখবেন তারপরও কিছু কাজের ধরন আমি উল্লেখ করেছি সেগুলোও আপনি শিখতে পারেন। সম্পূন্নটাই ডিপেন্ড করে আপনি কি কাজ শিখতে আগ্রহী অথবা আপনি কোন কাজের উপর পারদর্শী।  ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে উল্লেখিত কাজ গুলো আপনি শিখতে পারেন।

  • গ্রাফিক্স এন্ড ডিজাইন : গ্রাফিক্স এন্ড ডিজাইন এর মধ্যে অনেক গুলো ক্যাটাগরি আছে, যেমন-লগো ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন, বাউচার ডিজাইন, বুক ডিজাইন ইত্যাদি।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং : ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে ভিডিও মার্কেটিং, স্যোসাল মিডিয়া এডভারটাইজিং, ইমেইল মার্কেটিং, এসইও ইত্যাদি।
  • রাইটিং এবং ট্রান্সলেশান : রাইটিং এবং ট্রান্সলেশান এর মধ্যে আরি্কেল রাইটিং, ব্লগ রাইটিং, সিভি রাইটিং, ওয়েব সাইট রাইটিং ইত্যাদি।
  • ভিডিও বা এনিম্যাশন এডিটিং : শটফিল্ম ভিডিও, লগো এনিমেশন, ভিডিও ভয়েজ এডিটিং, গেমিং ভিডিও এডিটিং, ইত্যাদি।
  • মিউজিক এন্ড অডিও : সং রাইটিং, সাউন্ড ইফেক্ট ইত্যাদি
  • প্রোগ্রামিং এন্ড আইটি : ওয়েব প্রোগ্রামিং, গেম প্রোগ্রামিং, মোবাইল এ্যাপস, আইটি ইত্যাদি
  • এমএস অফিস : মাইক্রোসফট অফিসের ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, আউটলুক ইত্যাদি

নতুন হিসেবে শুরু করতে নির্দিষ্ট যেকোনো একটি কাজের উপর কাজ শুরু করুন। প্রথমে ইনকামের চিন্তা বাদ দিয়ে আগে শিখুন তারপর টাকা এমনিতে আপনার কাছে আসবে।

ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম বা ফ্রিল্যান্সিং আয়।

ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম কত করতে পারবেন অথবা ফ্রিল্যান্সিং আয় কেমন এই প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে সম্পূর্নটাই নির্ভর করবে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর। আপনি যত দক্ষ ও অভিজ্ঞ হবেন ততই আপনার ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকামের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং করে কতো আয় করবেন সেটা আপনিই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করার ইচ্ছা থাকলে এখনই কাজ শুরু করে দিন। ধীরে ধীরে কাজ শিখুন কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন সেটা হয়তো আপনি নিজেও কল্পনা করতে পারবেননা।



লেখক : মামুন সরকার

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন