ভিপিএন কি?

ভিপিএন যার ইংরেজী শব্দ VPN (Vertual privatr networt) এটি ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় আপনার সাইটের সাথে অন্য একটি ওয়েবসাইটের মাঝে গোপন কানেকশান তৈরী করে দেয়। পৃথিবীর অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলো বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক ব্লগ করা থাকে। ব্লককৃত ওয়েবসাইটে যদি আপনি ভিজিট করেন তাহলে ফলাফল হিসেবে ৪০৪ অথবা অন্যকিছু দেখতে পাবেন। আর যখনই আপনি এ ধরনের সমস্যা ফেস করবেন তখনই মূলত ভিপিএন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। ভিপিএন ব্যবহার করার ফলে আপনার সকল প্রকার তথ্য গোপন ও সুরক্ষিত থাকে। এছাড়াও স্পর্শকাতার বিষয় এবং বিভিন্ন থার্ড পার্টি থেকে নিজেকে ট্রেস মুক্ত রাখতেই ভিপিএন ব্যবহার করতে হয়।

বর্তমান সময়ে মানুষ তার অনলাইনের বিভিন্ন যোগাযোগ ও তথ্যর আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করে থাকে। যদিও ভিপিএন তৈরীর উদ্দেশ্য ছিলো শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কাজের সকল নেটওয়ার্ক গুলোকে নিরাপদ রাখা। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষেরও দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষনীয়। আমাদের দৈনন্দিন কাজে যেসব কারনে ও যেসব ক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তা নিয়েই আলোচনা করবো।

ভিপিএন কি? ভিপিএন কেনো ব্যবহার করবেন?

কি কি কাজে ভিপিএন ব্যবহার করা হয়ে থাকে

  • ভিডিও স্ট্রিমিং এর ক্ষেত্রে
  • বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র পড়ার কাজে
  • অফিস ও  স্কুল কলেজের কাজে
  • ব্যাক্তিগত তথ্যকে নিরাপদ রাখতে
  • নিজের প্রকৃত অবস্থান সিক্রেট রাখতে
  • বিভিন্ন গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ন ফাইল ডাউনলোডের ক্ষেত্রে
  • আইপি ট্র্যাকিং নিরাপদ রাখতে
  • পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে


ভিডিও স্ট্রিমিং এর ক্ষেত্রে

বিভিন্ন দেশের ওয়েবসাইটে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করা অথবা  আপলোডকৃত ভিডিও গুলো অন্যদেশ থেকে দেখার সরাসরি সুযোগ থাকে না বা পারমিশন দেওয়া থাকে না। এই ক্ষেত্রে এসব সাইটগুলোতে এক্সেস পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ভিপিএন কানেকশান। নন পারমিশন সাইটের কথা বললে প্রথমেই চলে আসে আমেরিকার নাম। আমেরিকার অনেক জনপ্রিয় সাইট রয়েছে যেগুলোতে ইচ্ছা করলে সরাসরি কেউ প্রবেশ করতে পারেনা। যেমন নেটফ্লিক্স একটি ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট। নেটফিক্সের নাম আপনার হয়তো জানার কথা, এখন আপনি মনে করুন বাংলাদেশ থেকে নেটফ্লিক্স এর সাইটের নাম লিখে সেই সাইটে প্রবেশ করার চেস্টা করলেন তখনই আপনি ব্যর্থ হবেন। 404 আসতে পারে। কারণ নেটফ্লিক্সের পারমিশন বাংলাদেশে দেওয়া হয়নাই। (এখন হয়তো পারমিশন আছে। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বললাম) বিশ্ব ব্যাপী জনপ্রিয় এই সাইটের অনেক দেশেই পারমিশন নেই। যেসব দেশে নেটফ্লিক্স এর পারমিশন নেই তার মানে কান্ট্রিব্লক। এই ক্ষেত্রে নেটফিক্সের সকল চ্যানেল ও ভিডিও উপভোগ করার জন্য অবশ্যই ভিপিএন কানেক্ট করে নিতে হবে।


আরো পড়ুন> ব্লগসাইট এসইও করার নিয়ম


বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র পড়ার কাজে

আন্তজার্তিক অনেক জনপ্রিয় সংবাদপত্র রয়েছে যেগুলো নিয়মিত নিউজ প্রকাশ করে থাকে। আলজাজিরা, সিএনএন, বিবিসি নিউস, দ্যা গার্ডিয়ান, টাইমস নিউস ইত্যাদি। এসব জনপ্রিয় আন্তজার্তিক নিউজ সাইটগুলোও বিভিন্ন দেশ ভিত্তিক কান্ট্রিব্লক করা থাকে। যেসব দেশে ব্লক করা থাকে সেসব দেশে থেকে সাইটগুলো ভিজিট করলে কোনো ফলাফল আসবেনা। সার্চ করলে 404 অথবা অন্য এরর লেখা প্রদর্শন করবে। নিমিষেই সাইটগুলোতে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভিপিএন কানেক্ট করে নিতে হবে।

অফিস ও স্কুল কলেজের কাজে

অফিসের গুরুত্বপূর্ন ডকুমেন্ট ও স্কুল কলেজের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইমেইল অথবা অন্যান্য মাধ্যমে আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করলে কোনো প্রকার ঝুকি থাকেনা। আমাদের মধ্যে অনেকেই হ্যাকিং এর মাধ্যমে ডাটা চুরির অভিযোগ করে থাকি। তার মূল কারন হচ্ছে ভিপিএন ব্যবহার না করা। অর্থাৎ ভিপিএন ব্যবহার করে কোনো তথ্যর আদান প্রদান করলে হ্যাকার কখনোই সেটিকে চুরি করতে পারবেনা। হ্যাকার যখন আইপি ট্যাকিং করার চেস্টা করবে ভিপিএন কানেকশান সেটিকে রিফিউজ করে দিবে এতে হ্যাকারের পক্ষে আইপি এড্রেস কখনোই জানা সম্ভব হবেনা।

ব্যাক্তিগত তথ্যকে নিরাপদ রাখতে

দৈনন্দিন আমাদের প্রয়োজনীয় অনেক তথ্যর আদান প্রদান করতে হয়। আমরা যদি সরাসরি কোনো তথ্যর আদান প্রদান করি মাঝখানে কোনো হ্যাকার দ্বারা আইপি ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তথ্যকে চুরি করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। মনে করুন আমি মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের কোনো একটি মেইল এড্রেসে কিছু ডকুমেন্ট ইমেইল করবো এখন আমি যদি সরাসরি মেইল পাঠাই তাহলে বাংলাদেশের মেইল এড্রেসে এটি নাও যেতে পারে যদি মাঝখানে কোনো হ্যাকার সেটিকে হ্যাকিং করে থাকে। মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের মেইল এড্রেসে আমি ঠিকই পাঠাবো কিন্তু মাঝখান থেকে হ্যাকার এটিকে সহজেই তার মেইলে নিয়ে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে আমরা যদি ভিপিএন ব্যবহার করি তাহলে হ্যাকারের কখনোই আমার আইপি এড্রেস ট্র্যাকিং করে মেইলটিকে হ্যাক করতে পারবেনা। হ্যাকার যখন চেস্টা করবে তখন তার চেস্টাকে ভিপিএন প্রত্যাখান করে দিবে।

নিজের প্রকৃত অবস্থান গুপন রাখতে

আমার বা আপনার বর্তমান অবস্থান জানা সম্ভব শুধুমাত্র ইন্টারনেট কানেকশানের মাধ্যমে। আমি যেখানেই থাকিনা কেনো যদি আমার সাথে ইন্টারনেট কানেকশান যুক্ত কোনো ডিভাইস থাকে তাহলে যে কেউ আইপি ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আমার অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবে। ভিপিএন ব্যবহারের ফলে এটি কখনোই সম্ভব নয়।


আরো পড়ুন> ব্লগপোস্ট এসইও করার নিয়ম


ফাইল ডাউনলোডের ক্ষেত্রে

বিভিন্ন সাইট থেকে গুরুত্বপূর্ন ফাইল ডাউনলোডের ক্ষেত্রেও ভিপিএন কানেকশান ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। VPN কানেকশান দ্বারা ফাইল ডাউনলোড করার সময় আপনার আইপি এড্রেসকে কেউ ট্র্যাক করতে পারবেনা। নিরাপদেই যে কোনো ফাইল গোপনীয়তার সহীত ডাউনলোড করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার শুধুমাত্র যে ভিপিএনটি কানেক্ট করেছে সেটি সর্ম্পকে জানতে পারবে। কোথায় থেকে বা কোন সার্ভার থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করছে সেটি বুঝতে পারবেনা।

আইপি ট্র্যাকিং নিরাপদ রাখতে

আপনি যখনই ইন্টারনেট কানেকশান চালু করেন তখন থেকেই আপনার ডিভাইটি অনলাইনে ভিসিবল হয়ে থাকে। এইক্ষেত্রে আপনার আইপি এড্রেসকে ট্র্যাকিং করা থেকে বাচতে আপনাকে ভিপিএন কানেকশান করতে হবে। আপনি যদি আইপি ট্র্যাকিং বা কারো কাছ থেকে নিরাপদে থাকতে চান তাহলে ইন্টারনেট কানেকশানের সাথে ভিপিএন ব্যবহার করাও উচিত। আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মনে করুন আপনি এমন একটি কাজ করেছেন যেটি মানুষ জানতে পারলে আপনার ক্ষতি হতে পারে। আপনি সরাসরি নিখোজ না হয়ে এমন অবস্থায় রইলেন যে, মানুষেরা কি করতেছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য জেনে নিজেকে আরো নিরাপদে রাখতে পারেন। সেই ক্ষেত্রেই মূলত ভিপিএন আপনার ডিভাইসকে যে কোনো ট্র্যাকিং থেকে নিরাপদে রাখবে।


পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে

পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করা অত্যান্ত জরুরী। আপনার ডিভাইসের সকল ইনফরমেশনকে নিরাপদ রাখার জন্য ভিপিএন কানেক্ট করে তারপর ওয়াইফাই ব্যবহার করবেন। যদি না করেন আপনার ডিভাইসের গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাবলিক ওয়াইফাই সেবাদানকারী, অন্যান্য ব্যবহারকারী সহ হ্যাকার আপনার তথ্যকে হ্যাকিং করতে পারে।

ভিপিএন কি নিরাপদ?

ভিপিএন ব্যবহার নিরাপদ নির্ভর করে আপনার ব্যবহারকৃত সার্ভিস প্রোভাইডারের উপর। আন্তজার্তিক অনেক জনপ্রিয় ও বিশ্বস্থ ভিপিএন প্রোভাইডার রয়েছে যারা কখনোই আপনার ডাটা বা অন্যান্য তথ্যকে লিকিং করবেনা। তারপরও একেবারেই ভিপিএনকে নিরাপদ বলা যায়না। বহুসংখ্যাক ফ্রি ভিপিএন প্রোভাইডার রয়েছে যারা প্রথম অবস্থায় ফ্রি সার্ভিস দিয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য গুলো তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। তারপর যে কোনো সময় আপনার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।

ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ থাকবে সস্থায় বা ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার না করে ভালো রেটিং সম্পন্ন কোম্পানির ভিপিএন ব্যবহার করুন। যদিও খরচের ক্ষেত্রে এসব কোম্পানি একটু বেশিই নিয়ে থাকে।

জনপ্রিয় ভিপিএন কোন গুলো

জনপ্রিয় প্রত্যেকটি ভিপিএনই আপনাকে পেইড করে ব্যবহার করতে হবে। পেইড ভিপিএনে যেসব সুবিধা পাবেন, ফ্রি ভিপিএনে সকল সুবিধা পাবেননা। নিচে জনপ্রিয় কয়েকটি পেইড ভিপিএনের নাম দিলাম আপনি চাইলে এর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। পেইড ভিপিএন তুলনামূলক ফ্রি ভিপিএন থেকে অনেক নিরাপদ ও ট্রাস্টেড। নিচের ভিপিএন সার্ভিস গুলো দুই ভার্সন মোবইল ও কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়।

  • অ্যাপ হটস্পটশিল্ড
  • সুপার ভিপিএন
  • হাই ভিপিএন
  • হটস্পটশিল্ড বেসিক
  • শিফন প্রো
  • টার্বো ভিপিএন
  • ভিপিএন মাস্টার
  • স্যামসাং ভিপিএনম্যাক্স ভিপিএন
  • স্ন্যাপ ভিপিএন
  • হোলা ভিপিএন
  • স্পিড ভিপিএন ইত্যাদি


কিভাবে ভিপিএন ব্যবহার করবেন

ভিপিএন ব্যবহার করার জন্য প্রথমেই আপনার কম্পিউটার অথবা মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশান থাকতে হবে। তারপর যে কোম্পানির ভিপিএন ব্যবহার করবেন সেটিকে ডাউনলোড করে কম্পিউটারে অথবা মোবাইলে ওপেন করুন। ওপেন করার পর আপনার প্রোফাইল সেটাপ করুন। তারপর কানেকশান অপশনটি অন করুন। অন করার পর যে দেশের সার্ভার ব্যবহার করতে চান সেই দেশের নাম সিলেক্ট করুন। নিজের মতো করে সিকিউরিটি অপশনের সেটিংসটি ভালো ভাবে করে নিন।  ব্যস এবার ব্রাউজার থেকে আপনার কাঙ্খিত সাইটটিকে ভিজিট করুন। অথবা ভিডিও স্ট্রিমিং, ফাইল ডাউনলোডিংয়ের কাজ চালিয়ে যান।

লেখায় কোনো প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে দয়া করে কমেন্টে জানাবেন। শুধরে নেওয়ার চেস্টা করবো আজ এ পযন্তই।  লেখাটি ভালো লাগলে সকলের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।


আরো পড়ুন> ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন


লেখক “মামুন সরকার”

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন