ব্লগিংয়ের সাথে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশেই ব্যাকলিংক সম্পর্কে শোনার কথা। ব্যাকলিংক কি এবং কিভাবে কাজ করে এই বিষয়টা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কনফিউসড থাকে। ব্যাকলিংকের প্রসঙ্গ তখনই আসে যখন কোনো ব্লগার তার সাইটটিকে গুগলে সবার উপর র‌্যাঙ্ক করাতে চান।
অনেক নতুন ব্লগার জানতে চেয়েছেন ব্যাকলিংক কি। ব্যাকলিংক কেনো প্রয়োজন? ব্যাকলিংক সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের বিস্তারিত বুঝানোর চেস্টা করবো। চলুন শুরু করা যাক।


ব্যাকলিঙ্ক কি?

ব্যাকলিঙ্ক হলো মনে করুন আপনার একটি ব্লগসাইট আছে এবং সেই সাইটে অনেক গুলো আর্টিকেল পোস্ট করেছেন, পোস্টকৃত আর্টিকেল গুলোকে অন্যান্য সাইটের মধ্যে লিঙ্ক আকারে বসানোই হলো ব্যাকলিঙ্ক। অন্যান্য সাইট বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি, আমরা যারা ব্লগিং করি অথবা ইউটিউবিং করি সবাই কোনো না কোনো সমস্যার কারনে অন্যান্য ব্লগসাইট অথবা বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর সাইটের সাহায্যে নিয়ে থাকি। আমরা কোনো কিছু জানা না থাকলে প্রশ্ন করি এবং কোনো কিছু জানলে প্রশ্নের উত্তর দেই। যখন কোনো সাইটে কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর সংক্ষিপ্ত আকারে দেওয়ার পর বিস্তারিত জানার জন্য প্রশ্নের সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো লিঙ্ক বসানো হয় সেটাকেই বলে ব্যাকলিঙ্ক। অর্থাৎ সেই লিঙ্কের মাধ্যমে যদি কেউ ক্লিক করে তাহলে আপনার সাইটে এসে আপনার লেখাটিকে পড়বে।



ব্যাকলিংক কি?  Backlink সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

ব্লগের ভাষায় এই পদ্ধতিটিকেই বলে ব্যাকলিংক। আপনি যখন কোনো সাইটে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আপনার সাইটের লিংক বা নির্দিষ্ট কোনো পোস্টের লিঙ্ক সাবমিট করবেন তখন আপনার দেওয়া প্রশ্নের উত্তরটি সেই সাইট থেকে অনুমোদন করার পর আপনার লেখাটি উত্তর হিসেবে পরিগনিত হবে।
গুগল যখন আপনার সাইটটিকে স্ক্রলিং করবে তখন সেই সাইটে সাবমিট করা লিংকটিকেও স্ক্রল করবে। গুগলে স্ক্রল করার সময় যদি সেই লিঙ্কটিতে ডুফলো হিসেবে অনুমোদন করে থাকে তাহলে গুগল সেটিকে গুরুত্ব সহকারে স্ক্রল করে গুগল রেংকে নিয়ে আসে। ব্যাকলিঙ্ক যত বেশি হবে ততই আপনার সাইটটি গুগল দ্রৃত রেংক করবে।


ব্যাকলিঙ্ক কেনো প্রয়োজন?

আমি যদি ভুল না বলি তাহলে নিশ্চয়ই প্রথমে আপনি আপনার সাইট কেনো গুগল রেংক করছে না এই নিয়ে গবেষনা করছিলেন, এবং সেখানে হয়তো ব্যাকলিংক সম্পর্কে কিছু বলা ছিলো এজন্যই আমার এই লেখাটি পড়ছেন। যাইহোক আপনার সাইটের ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর জন্য এবং ব্লগসাইটকে গুগলে রেঙ্ক করানোর জন্য অবশ্যই ব্যাকলিঙ্ক প্রয়োজন। আপনার সাইটের পোস্টকৃত আর্টিকেল গুলোকে গুগলে ইনডেস্ক করানোর জন্য যখন গুগল স্ক্রলিং করে তখন বিভিন্ন সাইটের মধ্যে বসানো ব্যাকলিঙ্ক গুলোকেও স্কল করে থাকে। ব্যাকলিংকগুলো যদি কোনো প্রকার স্প্যামিং না হয় এবং ডুফলো ব্যাকলিঙ্ক হয় তাহলে গুগল আপনার সাইটটিকে খুব দ্রুত রেঙ্ক করানোর ব্যবস্থা করে থাকে।
ব্যাকলিংকে আমাদের প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার মতোও মনে করতে পারেন। যে যত বেশি ভোট পাবে সেই জয়ী হবে। তারপর দ্বিতীয়, তৃতীয় পজিশন নির্ধারিত হবে। ব্যাকলিংকও সে রকম। আপনার সাইটে যত বেশি ব্যাকলিংক থাকতে গুগল তত বেশি আপনার সাইটকে উপরে নিয়ে আসবে। সবচেয়ে বেশি ব্যাকলিঙ্ক করতে পারলে সবার উপরে অবস্থান করতে পারবেন। অর্থাৎ অনলাইনে শত শত ব্লগসাইট রয়েছে যারা ব্যাকলিঙ্ক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, আপনিও আপনার সাইটে অন্যকে ব্যাকলিংক দিতে পারেন।


কিভাবে ব্যাকলিংক (Backlink) তৈরি করবেন?

এবার আসা যাক গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নে, অর্থাৎ ব্যাকলিংক (Backlink) তৈরি করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। ব্যাকলিংক তৈরী করতে প্রথমে আপনাকে বিভিন্ন সাইটে ভিজিট করতে হবে। যেমন প্রশ্ন উত্তর সাইটের মধ্যে বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় সাইট হলো কোয়ারা। আপনার মোবইল অথবা ডেস্কটপ থেকে কোয়ারা সাইটে একাউন্ট সাইন আপ করুন। সাইনআপ করার পর সেখান থেকে আপনার ব্লগসাইটে যে আর্টিকেলটি পোস্ট করেছেন সেই আর্টিকেল রিলেটেড কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করুন। সেখানে আপনি দেখতে পাবেন অনেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। আপনার আর্টিকেল রিলেটেড প্রশ্নটিতে ক্লিক করে তাদের প্রশ্নটির সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন। এবং বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন এভাবে লিখে সেই লেখার মধ্যে আপনার ব্লগ পোস্টের লিঙ্কটি বসিয়ে দিন। কোয়ারা থেকে অনুমোদন করা হয়ে গেলেই আপনার একটি ব্যাকলিঙ্ক তৈরী হয়ে যাবে।

এভাবে প্রত্যেকটি প্রশ্ন পড়ে দেখুন সেই রিলেটেড কোনো আর্টিকেল আপনার ব্লগে লিখেছেন কিনা। যদি লিখে থাকেন তাহলে সেই পোস্টের লিঙ্কটিও বসিয়ে দিন।
মনে হচ্ছে পুরো বুঝতে পারেননি, চলুন হাতে কলমে বুঝিয়ে দেই। মোবাইল অথবা ডেস্কটপ থেকে কোয়ারা সাইটে লগইন করুন। ( আপনি চাইলে অন্য সাইটেও যেতে পারেন) তারপর সেখান বাংলা ভাষা সিলেক্ট করুন। ভাষা সিলেক্ট করার পর নিচের ছবির মতো একটি ইন্টারফেস আসবে, এখান থেকে প্রথমে সার্চ করে আপনি যে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ব্যাকলিংক তৈরী করতে চান সেরকম একটি প্রশ্ন বাছাই করে সেটিতে ক্লিক করুন। প্রশ্নটি ওপেন হওয়ার পর উত্তর দিন লেখার উপর ক্লিক করুন। তারপর খালি ঘরে প্রশ্নের উত্তর লিখুন।


ব্যাকলিংক কি?  Backlink সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।


নিচের ছবিটি লক্ষ করুন, আমি উক্ত প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত একটি উত্তর লিখেছি, হলুদ চিহ্নিত ঘরে ক্লিক করে লিঙ্কটি পেস্ট করেছি। তারপর তৃতীয় ছবিটি লক্ষ করুন।


ব্যাকলিংক কি?  Backlink সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

এখানে লিঙ্কটি পেস্ট করার পর যোগ করুন এ ক্লিক করার পর লিঙ্কটি জেনারেট হয়ে গেছে। লিঙ্ক জেনারেট হওয়ার পর দেখতে চতুর্থ ছবিটির দিকে লক্ষ করুন। যেখানে লিঙ্কটি বসিয়েছি সেই লেখাটির কালার পরিবর্তন হয়েছে।


ব্যাকলিংক কি?  Backlink সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।


এবার জমা দিন এ ক্লিক করে আপনার ব্যাকলিঙ্কটি সাবমিট করুন। কোয়ারা থেকে আপনার উত্তরটি অনুমোদন করলে আপনার সাইটের নামে একটি ব্যাকলিঙ্ক তৈরী হয়ে যাবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।


ব্যাকলিংক কি?  Backlink সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

ব্যাকলিঙ্ক করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন?

  • প্রাসঙ্গিক ব্যাকলিঙ্ক তৈরী করুন। যে বিষয়ের উপর প্রশ্ন করেছেন শুধুমাত্র সেই বিষয়ের উপর উত্তর দিয়ে সেই বিষয় সম্পর্কিত পোস্টের লিঙ্ক জেনারেট করুন।
  • ইতিপূর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর অন্য কারো মাধ্যমে দেওয়া হয়ে গেছে , অনুরূপ না লিখে ব্যাতিক্রম ভাবে উত্তর দেওয়ার চেস্টা করুন।
  • অন্যকারো লেখা কপি করবেন না। নিজে থেকে লেখার চেস্টা করবেন।
  • কোনো কিছু না লিখে শুধুমাত্র লিঙ্ক জেনারেট করবেন না।
  • সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেস্টা করুন এবং কৌশলে বিভিন্ন পজিশনে লিঙ্ক জেনারেট করুন।
  • ব্যাকলিঙ্কটি ভালো মানের ওয়েবসাইট/ব্লগ থেকে নেওয়ার চেস্টা করবেন,
  • ব্যাকলিঙ্কটি অবশ্যই হাই ডোমেইন অথরিটি এবং পেজ অথরিটি সাইট থেকে নেওয়ার চেস্টা করবেন। পেইড ব্যাকলিংক থেকে বিরত থাকবেন।
  • যেসব সাইটে প্রতিদিন ভিজিটর সংখ্যা বেশি সেসব সাইট থেকে ব্যাকলিংক নেওয়ার চেস্টা করবেন।



কোন কোন সাইট থেকে ব্যাকলিঙ্ক পাবেন?

  • কোয়ারা, (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • ই নলেজ (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • বিষয় আনসার (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • Nirbik.Com (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • ই-নলেজ (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • আস্ক প্রশ্ন (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • আন্স বাংলা (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • ই-প্রশ্ন (প্রশ্নউত্তর সাইট),
  • বিভিন্ন ব্লগ ইনফোপ্লাসবিডি, ব্লগার বাংলাদেশ, টেকটিউনস সাইট , বাংলা টেক ইনফো, লার্নিং বাংলাদেশ, প্রগ্রেস বাংলাদেশ ইত্যাদি
  • বিভিন্ন নিউস সাইট যেমন প্রথম আলো, যুগান্তর, কালের কন্ঠ, ইত্তেফাক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্যাদি।


​সবাই ভালো থাকবেন। আর পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে।





লেখক : মামুন সরকার

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন