কম্পিউটার বানাতে কি কি প্রয়োজন ?
মার্কেট থেকে বেশি টাকা খরচ করে কম্পিউটার কিনতে না চাইলে আপনার জন্যই আজকের পোস্ট। মার্কেটে প্রত্যেকটি ব্রান্ডের পিসি বা কম্পিউটারে নির্দিষ্ট কনফিগারেশন থাকে। কোনো কম্পিউটারে র্যাম 16 জিবি তো হার্ডডিস্ক 300 জিবি। কোনোটাতে হার্ডডিস্ক 1 টিপি তো র্যাম 4 জিবি। এরকম বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পার্থক্যর কারনে মার্কেটে নতুন কম্পিউটার এর দাম তুলনামূলক ভাবে কম-বেশি হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে অল্প টাকার মধ্যে আপনার পছন্দমতো আপনি নিজেই একটি কম্পিউটার বানিয়ে ফেলতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক একটি ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার বানাতে কি কি জিনিস/যন্ত্রাংশের প্রয়োজন ও তার আনুমানিক দাম কতো।
একটি কম্পিউটার যেসকল জিনিসগুলো আপনার থাকতে হবে।
- মাদারবোর্ড
- প্রসেসর
- র্যাম
- হার্ডডিস্ক
- অপটিক্যাল ড্রাইভ( ডিস্ক ড্রাইভ)
- পাওয়ার সাপ্লাই
- সিপিউ কুলার
- মনিটর
- মাউস
- কিবোর্ড
- সাউন্ড কার্ড
- স্পিকার
- গ্রাফিক্স কার্ড
- লেনকার্ড
- টিভি কার্ড
- কেসিং
- মাদারবোর্ড বা বায়োস
মাদারবোর্ড হলো কম্পিউটার এর মূল অংশ, যেখানে প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশের সংযোগ দিয়ে সম্পূর্ন একটি কম্পিউটার তৈরী করতে হয়। মাদারবোর্ড কেনার আগে প্রথমেই আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে মাদারবোর্ডটি কোন কোন মডেলের প্রসেসর এবং সর্বোচ্চ কত গিগাবাইট র্যাম সাপোর্ট করে। আপনার প্রসেসর এবং র্যামের সাথে মিল রেখেই একটি মাদারবোর্ড নির্বাচন করুন। মাদারবোর্ডে হার্ড ডিস্কের জন্য কতগুলো পোর্ট আছে সেটি দেখে নিন। যত বেশি পোর্ট থাকবে ততই আপনার জন্য ভালো। এছাড়াও ইউএসবি পোর্ট কতগুলো আছে সেটিও খেয়াল রাখুন। বাজারে আসা সর্বশেষ মডেলগুলো থেকে যেকোনো একটি মডেলের মাদারবোর্ড নির্বাচন করার চেষ্টা করুন। 4000 হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের মাদারবোর্ড কিনতে পাওয়া যায়। আপনার পছন্দ অনুযায়ী কিনতে পারেন।
- প্রসেসর
কম্পিউটার কেনার কথা চিন্তা করলে প্রথমেই আপনাকে প্রসেসর ঠিক করতে হবে। সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হল ইনটেল। এদের প্রসেসরই বাজারে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আর এএমডি প্রসেসর মানের দিক থেকে অনেক ভাল এবং মূল্য সাশ্রয়ী। প্রসেসরের মূল্য সাধারণত 4,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের প্রসেসর মার্কেটে পাওয়া যায়। আপনার পছন্দ ও সাধ্য অনুযায়ী যে কোনো একটি প্রসেসর কিনতে পারেন।জেনারেশন- প্রসেসরের জেনারেশন বলতে সেই প্রসেসর কতটা অত্যাধুনিক সেটি বোঝায়। প্রায় প্রতি বছরই ইনটেল নতুন প্রযুক্তির প্রসেসর মুক্তি দেয়। প্রতিটি নতুন প্রসেসরের কার্যক্ষমতা আগেরটির তুলনায় বেশি থাকে। একটি প্রসেসরের ভেতরে অসংখ্য ট্রান্সিস্টর থাকে। প্রতি বছরই ইনটেল সেই সকল ট্রান্সিস্টরকে আরো উন্নত করে এবং নতুন জেনারেশন হিসেবে মুক্তি দেয়। যেমন চতুর্থ জেনারেশন, পঞ্চম জেনারেশন কিংবা ষষ্ট জেনারেশন।সুতরাং প্রসেসরের জেনারেশন যত আধুনিক হবে, কার্যক্ষমতাও তত ভালো হবে। সিরিজ- প্রসেসর কেনার ক্ষেত্রে প্রসেসরের সিরিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজ যত আধুনিক হবে প্রসেসরের পারফর্মেন্সও তত ভালো হবে। বর্তমানে কয়েকটি সিরিজের প্রসেসর মার্কেটে বিদ্যমান যেমন ইন্টেল জেনোন, পেন্টিয়াম / সেলেরন, অ্যাটম, কোর আই থ্রি, কোর আই ফাইভ, কোর আই সেভেন, সর্বশেষ কোর আই ৯.
- র্যাম
কম্পিউটারে র্যাম যত বেশি হবে তত ভালো। বাজারে ২ গিগাবাইট থেকে শুরু করে ৮, ১৬ এমনকি ৩২ গিগাবাইটের র্যামও পাওয়া যায়। আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী যেকোনো ক্যাপাসিটির একটি র্যাম নির্বাচন করুন। মনে রাখবেন র্যামের বাস ফ্রিকোয়েন্সি যত বেশি হবে, র্যামের কার্যক্ষমতাও তত বেশি দ্রুত গতির হবে। বাজারে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের র্যাম পাওয়া যায়।
- হার্ডডিস্ক
স্টোরেজ সাধারণত ২ ধরনের হয়। এসএসডি এবং হার্ডডিস্ক। বর্তমানে বাজারে ১৬০ গিগাবাইট থেকে শুরু করে ৩ টেরাবাইটের স্টোরেজও পাওয়া যায়। ৫০০ গিগাবাইট। দাম এক হাজার ৫০০ টাকা। • এসএসডি- এসএসডি মূলত কম্পিউটারের একধরনের ফ্ল্যাশ স্টোরেজ ব্যবস্থা। যার মূল কাজ হল তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা। ওজনে হালকা এবং আকারে ছোট হওয়ায় দিন দিন এই এসএসডির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং হার্ড ড্রাইভ এর প্রচলন কমে আসছে। এসএসডিতে হার্ড ড্রাইভের মত কোন ডিস্ক থাকে না। এতে কয়েকটি ইলেকট্রিক চিপ থাকে যা ডাটা সংরক্ষনের কাজটি করে। এই এসএসডি স্টোরেজ ব্যবস্থা হার্ড ড্রাইভ এর তুলনায় অনেক দ্রুত কাজ করে। কয়েক মাইক্রো সেকেন্ডের মধ্যে এর থেকে ডাটা পাওয়া যায় যা হার্ড ডিস্কের করতে কয়েক মিলি সেকেন্ড সময় লেগে যায়। PCIe x4 এসএসডি প্রচলিত সাটা ড্রাইভ থেকে ৩ গুন দ্রুত। ইএমএমসি মেমরিগুলো টেকনিক্যালি এসএসডি হলেও তা হার্ড ডিস্কের চেয়ে দ্রুত না। আপনার বাজেট বেশি হলে এসএসডি স্টোরেজ কেনার চেষ্টা করুন। তবে হার্ডডিস্ক এর তুলনায় এসএসডি কিছুটা ব্যায়বহুল। • এইচডিডি- হার্ড ডিস্ক বর্তমানে ২৫০ জিবি থেকে ২ টেরাবাইট পর্যন্ত পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনার চাহিদা অনুযায়ী হার্ডডিস্ক নিন। আপনার যদি বেশি ডাটা ব্যাকআপ রাখার প্রয়োজন হয় তাহলে ৭৫০ জিবি কিংবা ২ টেরাবাইট এর হার্ডডিস্ক নিতে পারেন। নাহলে ৫০০ জিবি হার্ডডিস্কই যথেষ্ট। হার্ডডিস্ক নির্ধারণ করার সময় এর আরপিএম ভালো করে দেখে নিন। আরপিএম যত বেশি হবে ফাইল ট্রান্সফার এর গতি তত বেশি হবে।
- ডিস্ক ড্রাইভ
ডিস্ক ড্রাইভের কাজ হলো কোনো ডিভিডি সিডি কম্পিউটারে সংযোগ দেওয়ার জন্য ব্যাবহার করা হয়। যেমন কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল দেওয়ার জন্য কম্পিউটারে ডিভিডি সিডি প্রবেশ করিয়ে ইন্সটল দিতে হয়। বর্তমানে ডিস্ক ড্রাইভের পরিবর্তে অনেকে পেনড্রাইভ ব্যাবহার করে থাকে। আপনার যদি পেনড্রাইভ থাকে তাহলে অযথা টাকা খরচ করে ডিস্ক ড্রাইভ না কেনাই ভালো।
- পাওয়ার সাপ্লাই
কম্পিউটারে সংযোগকৃত সকল যন্ত্রাংশ গুলো চলার জন্য ইলেকট্রিক এর প্রয়োজন হয়। এর জন্য পাওয়ার সাপ্লাই লাগাতে হয়। পাওয়ার সাপ্লাই না লাগালে কম্পিউটারের কোনো যন্ত্রাংশ চলাচল করবে না।
- সিপিউ কুলার
কম্পিউটারের প্রোগ্রাম চলার সময় সকল প্রকার চাপ সিপিউর উপর পড়ে। এর জন্য সিপিউকে ঠান্ডা রাখার জন্য সিপিউ কুলার প্রয়োজন। সিপিউ কুলার না লাগালে কম্পিউটার রান করার সময় সিপিউ গরম থাকলে আপনার কম্পিউটার অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। পোগ্রাম ঠিক মতো রান করবে না। অটোমেটিক রিস্টার্ট হবে।
- মনিটর
পিসির সকল পোগ্রাম দেখার জন্য মনিটর এর প্রয়োজন। যেটা দেখতে টিভির মতো। এখানে কম্পিউটারের সকল প্রকার কাজ প্রদর্শিত হয়। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির অনেক সুন্দর সুন্দর মনিটর পাওয়া যায়। 6000 হাজার থেকে শুরু আপনার সামর্থ অনুযায়ী বেশি দামের মনিটর কিনতে পারেন।
- মাউস
কম্পিউটারের সকল কাজ গুলো দ্রুত করার জন্য মাউসের প্রয়োজন হয়। মাউস দিয়ে এক ফাইল থেকে অন্য ফাইল খোলা, প্রিন্ট্র করা, কোনো কিছু ডিলিট করা, কপি, পেস্ট করা, সহ হাজারো কাজ মাউস দ্বারা করা হয়ে থাকে এ জন্য মাউসের প্রয়োজন পড়ে। বাজারে 300 থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের মাউস পাওয়া যায়।
- কিবোর্ড
মাউসের মতো কিবোর্ড দ্বারাও কম্পিউটারের অনেক কাজ করা হয়ে থাকে। টাইপিং, ফাইল সেভ, এক প্রোগ্রাম থেকে অন্য প্রোগ্রামে যাওয়া, কপি, পেস্ট, ডিলিট, প্রিন্ট করা, ফ্রন্ট ছোট বড় করা সহ হাজারো কাজ কিবোর্ড দিয়ে করা হয়ে থাকে। বাজারে কিবোর্ড এর দাম 500 টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের কিবোর্ড পাওয়া যায়।
- সাউন্ড কার্ড
গান শোনা, মুভি দেখা সহ ইত্যাদির কাজের জন্য সাউন্ড এর দরকার হয়। এ জন্য স্পিকার দিয়ে শব্দ শোনার জন্য কম্পিউটারে সাউন্ড কার্ড ব্যাবহার করতে হয়।
- স্পিকার
গান শোনা, মুভির শব্দ শোনা সহ বিভিন্ন রকম শব্দ শোনার জন্য স্পিকার এর প্রয়োজন হয়।
- গ্রাফিক্স কার্ড
ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গান শোনা কিংবা মুভি দেখা এসকল সাধারন কাজের জন্য কম্পিউটারে আলাদা গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন নেই। বিল্ট-ইন গ্রাফিক্স ই যথেষ্ট। তবে ছবি-ভিডিও এডিটিং কিংবা গেমিং করতে চাইলে আলাদা ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মাদারবোর্ড এবং প্রসেসরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি গ্রাফিক্স কার্ড নির্বাচন করুন। তবে গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে সাথে কুলিং সিস্টেমের ব্যাপারটিও লক্ষ্য রাখবেন। কেননা পর্যাপ্ত কুলিং সিস্টেম না থাকলে অতিরিক্ত গরম হয়ে গ্রাফিক্স কার্ড পুড়ে যেতে পারে।
- লেনকার্ড
লেনকার্ড এর কাজ হলো আপনার কম্পিউটারে যদি ইন্টারনেট সংযোগ চালাতে চান। এবং তা যদি হয় নেটওয়ার্ক ক্যাবলের মাধ্যমে তাহলে আপনাকে লেনকার্ড লাগাতে হবে।
- টিভি কার্ড
আপনার কম্পিউটার এর মনিটর দিয়ে যদি টিভি দেখতে চান তাহলে আপনাকে শুধু একটি টিভি কার্ড কিনে আপনার কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ দিলেই হবে। তাহলে আপনি সকল প্রকার টিভি চ্যানেল দেখতে পাবেন।
- কেসিং
সর্বশেষ আপনাকে কম্পিউটারের সকল প্রকার যন্ত্রাংশ সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য কেসিং এর প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বাজারে বেশ কিছু গেমিং কেসিং পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন এবং বিভিন্ন রঙের লাইটিং থাকে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি নির্বাচন করুন। তবে পাওয়ার সাপ্লাই বেশি থাকলে ভালো, যদি ভবিষ্যতে এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ড কিংবা সাউন্ড কার্ড ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।
লেখক : মামুন সরকার