ইউটিউব বর্তমান সময়ের একটি আলোচিত ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে সারাবিশ্বে প্রতিদিন মানুষ লক্ষ লক্ষ ভিডিও আপলোড করছে। প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে ভিডিও আকারে মানুষের সামনে তুলে ধরছে। ইউটিউবে আপলোডকৃত ভিডিওর মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানতে পারছে অনায়াসে। মানুষ তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করছে কমেন্ট বক্সে, লাইক,ডিসলাইক করছে তাদের পছন্দমতো। ইউটিউবের ভিডিও নির্মাতাকে পছন্দ হলে শ্রোতা তার চ্যানেলটিকে সাবসক্রাইব করে থাকে। ইউটিউবের ভিডিও মানুষের কাছে ভালো লাগলে সেগুলোকে শেয়ার করছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে করে একজন থেকে আরেকজনের কাছে সহজেই পৌছৈ যাচ্ছে ভিডিও গুলো। নিত্য নতুন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, তথ্য প্রযু্ক্তির বিভিন্ন হালনাগাদ তথ্যও পৌছে যাচ্ছে মানুষের হাতের মুঠোয়। মূলত এর কারনেই ইউটিউবকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
প্রফেশনাল ইউটিউবিং শুরু করতে অনেক গুলো জিনিসের প্রয়োজন হয়। প্রফেশানাল ছাড়া যদি সাদামাটা ভাবে ইউটিউবিং শুরু করতে চান তাহলে তেমন কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু আপনার হাতের মোবাইলের মাধ্যমে একটি চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড দিলেই আপনি একজন ইউটিউবার। তবে এই ধরনের ভিডিওতে শ্রোতাদের তেমন একটা আগ্রহ থাকেনা। সেজন্যই প্রফেশানালের মতো ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করলে আপনার চ্যানেল এবং আপনার পরিচিতি দ্রুত বাড়বে। ইউটিউবিং শুরু করতে যেসব বিষয় গুলো আপনার অবশ্যই জানা উচিত। এই আটিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে ইউটিউবিং শুরু করবেন? তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
- একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল অথবা একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার,
- একটি ইন্টারনেট কানেকশান,
- একটি জিমেইল আইডি,
- একটি ইউটিউব চ্যানেল ও চ্যানেলের নাম।
- একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা অথবা মোবাইল ক্যামেরা,
- একটি মাইক্রোফোন,
- একটি ক্যামেরা স্ট্যান্ড লাইটিং সহ,
- ভিডিও কন্টেন্ট বা ক্যাটাগরি বা বিষয় সিলেক্ট করা,
- ভিডিও ব্যাকরাউন্ড,
- একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার,
- একজন সাহায্যকারি,
- সর্বশেষ অতিরিক্ত সময়।
এবার জেনে নেওয়া যাক উপরের উল্লেখিত বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত-
- একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল অথবা একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার।
ইউটিউবিং শুরু করতে সর্ব প্রথম আপনার দরকার একটি মোবাইল অথবা একটি ল্যাপটপ বা একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার। উল্লেখিত তিনটির মধ্যে যেকোনো একটি হলেও আপনি ইউটিউবিং শুরু করতে পারবেন। তবে, আপনি যদি একজন প্রফেশনাল ইউটিউবার হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপ থাকতে হবে। ল্যাপটপ বা ডেক্সটপে আপনি যে কাজ গুলো করতে পারবেন সেগুলো মোবাইলে সহজে করতে পারবেননা। ল্যাপটপের স্কিন বড় হওয়াতে সবগুলো কাজ খুব নিখুতভাবে করা যায়। যেটা মোবাইলে করতে একটু সমস্যা হয়। তবে আমার পরামর্শ থাকবে আপনি যদি নতুন ইউটিউবিং শুরু করতে চান মোবাইল দিয়েই শুরু করুন। আপনার যতটুকু অভিজ্ঞতা আছে সেই অনুযায়ী ভিডিও আপলোড শুরু করে দিন। বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় ইউটিউবার আছে যারা শুধুমাত্র মোবাইল দিয়ে ভিডিও বানিয়েই সফল হয়েছেন। আপনিও তাদের মতোই শুরু করতে পারেন।
- একটি ইন্টারনেট কানেকশান।
ইন্টারনেট কানেকশান অত্যান্ত গুরুত্বপূন একটি বিষয়। ইন্টারনেট কানেকশান না থাকলে এক কথায় আপনি শুধু ইউটিউবিংই নয় অনলাইন সম্পকিত কোনো কাজই করতে পারবেননা। অবশ্য বর্তমানে সবাই মোবাইলে মাসিক ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। অথবা বিভিন্ন প্যাকেজ ভিক্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। যাইহোক ইন্টারনেট সম্পকে আশা আপনাদের বেশি বুঝাতে হবেনা।
- জিমেইল আইডি।
শুধু ইউটিউবিং শুরু করতেই জিমেইল আইডির প্রয়োজন এমন নয়। আপনি যদি প্লে-স্টোরও ব্যবহার তাতেও আপনার জিমেইল আইডির প্রয়োজন হবে। যে কোনো যোগাযোগের ক্ষেত্রেও জিমেইল আইডির প্রয়োজন। মোটকথা অনলাইন জগতে আপনার জিমেইল আইডির অবশ্যই প্রয়োজন। জিমেইল গুগলের একটি অংশ। জিমেইল আইডি খুলতে কোনো প্রকার টাকার প্রয়োজন নেই। এটি সম্পন্ন ফ্রিতে খুলতে পারবেন।
- একটি ইউটিউব চ্যানেল ও চ্যানেলের নাম
এবার আশা যাক মূল প্রসঙ্গে, ইউটিউবিং শুরু করতে হলে অবশ্যই একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রয়োজন। আপনি যদি ইতিমধ্যে শিখে থাকেন ইউটিউব চ্যানেল খুলার নিয়ম তাহলে এখনি বানিয়ে ফেলুন একটি সুন্দর ইউটিউব চ্যানেল। আর যদি না শিখে থাকেন তাহলে আপনার জন্য আমরা আছিনা!!! এই লেখার নিচে কিভাবে সুন্দর একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন তার লিঙ্ক আমি দিয়ে দিব। ইউটিউব চ্যানেল না থাকলে কিভাবে ইউটিউবিং শুরু করবেন? ইউটিউবিং শুরু করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। চ্যানেল খুলার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে ইউটিউব চ্যানেলের সুন্দর নাম। যেটির মাধ্যমে অডিয়েন্সরা আপনার চ্যানেলের নামটিকে সহজে মনে রাখতে পারবে।
- একটি ক্যামেরা অথবা মোবাইল ক্যামেরা,
ইউটিউবিং শুরু করার জন্য প্রথমেই যেটা থাকতে হবে সেটা হলো একটি মোবাইল যার দ্বারা ক্যামেরার কাজও করা যাবে অথবা একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। প্রথম অবস্থায় যদি সাধাসিধে ভাবে শুরু করতে চান তাহলে আপনার আলাদা ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। আপনার হাতের ব্যবহৃত মোবাইল দ্বারাই শুরু করতে পারেন। যখন ইউটিউবে ধীরে ধীরে আপনি উন্নতি করতে থাকবেন তখন কিছু টাকা বিনিয়োগ করে ভালো মানের একটি ক্যামেরা কিনে নিতে পারেন।
- একটি মাইক্রোফোন,
ভিডিও রেকর্ডিং করার সময় আপনার কথাগুলোকে সুন্দরভাবে রেকর্ড করার জন্য ভালো মানে একটি মাইক্রোফোন প্রয়োজন। মনে রাখবেন ইউটিউবের সবচেয়ে গুরুত্বপূন বিষয় হলো সাউন্ড রেকর্ডিং। আপনার সাউন্ডের উপর নির্ভর করবে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভবিষ্যৎ। ভিডিওর সাউন্ড যত ভালো হবে ততই আপনার চ্যানেলের ভিউস বৃদ্ধি পাবে।
- একটি ক্যামেরা স্ট্যান্ড লাইটিং সহ,
ভিডিও রেকর্ডিং করার সময় আপনার চেহারাকে সুন্দর ও উজ্বল করতে এবং ভিডিও কোয়ালিটি ভালো করতে অবশ্যই ক্যামেরা স্ট্যান্ড ও লাইটিং এর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ভিডিও করার সময় যদি আপনার চেহারা কালো ও অন্ধকার থাকে তাহলে আপনার ভিডিও কেউ দেখার উৎসাহ পাবেনা।
- ভিডিও কন্টেন্ট বা ক্যাটাগরি বা বিষয় সিলেক্ট করা,
ইউটিউবিং ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব বিষয় হলো চ্যানেলের কন্টেন্ট বা বিষয়। কন্টেন্ট বা বিষয় হলো আপনি কিসের উপর ভিডিও বানাবেন। মনে রাখবেন আপনার চ্যানেলে যদি হযবরল ভিডিও আপলোড করেন তাহলে আপনার চ্যানেলকে কখনোই র্যাঙ্ক করাতে পারবেন না। আপনাকে যে কোনো নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর ভিডিও আপলোড করতে হবে। আপনি যদি টেকনোলজিতে অভিজ্ঞ হন তাহলে শুধুমাত্র টেকনোলজি সম্পর্কিত সকল প্রকার ভিডিও আপলোড করবেন। অথবা আপনি গান গাওয়ায় পারদর্শী হন তাহলে শুধুমাত্র গানের ভিডিও আপলোড করবেন। এতে করে আপনার চ্যানেলের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যাক অডিয়েন্স বা শ্রোতা পাবেন যারা শুধু গানই পছন্দ করেন।
- ভিডিও ব্যাকরাউন্ড,
ভিডিওকে দেখতে আকর্ষনীয় করার জন্য ভিডিও ব্যাকরাউন্ড ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। ভিডিওর ব্যাকরাউন্ড ব্যবহার করে ভিডিওকে আকর্ষনীয় ও সুন্দর ভাবে তৈরী করা যায়। আপনি একজন নতুন ইউটিউবার হয়ে থাকলে ভিডিওর ব্যাকরাউন্ড হিসেবে গ্রিনস্কিন ব্যবহার করতে পারেন। গ্রিনস্কিন ব্যবহার করলে ভিডিও ব্যাকরাউন্ড রিমোভ করে আপনার পছন্দমতো যেকোনো স্কিন লাগাতে পারেন।
- একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার,
রেকর্ডিংকৃত ভিডিওকে শ্রোতাদের দেখার উপযোগী করতে, বিভিন্ন ব্যাকরাউন্ড মিউজিক, বিভিন্ন টেক্সট,ট্রানজিশন যোগ করার জন্য ভিডিও এডিটিং করার প্রয়োজন হয়। তাছাড়াও ভিডিও রেকর্ডিং করার সময় অপ্রয়োজনীয় অংশকে বাদ দেওয়ার জন্যও ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। নতুন হিসেবে ইউটিউবিং শুরু করতে চাইলে কাইনমাস্টার ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে শুরু করতে পারেন। এটি সম্পূন্ন ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে।
- একজন সাহায্যকারি,
এককভাবে যদি ভিডিও রেকর্ডিং করেন তাহলে আপনার ভিডিও রেকডিং ভালো হবেনা। এজন্য ভিডিও রেকর্ডিং ভালো করার জন্য একজন সহকারি প্রয়োজন। তবে আপনি একাও রেকর্ডিং করতে পারেন এতে করে আপনার সময় অবচয় হবে বেশি। ভিডিওর কোয়ালিটি ভালো মানের হবেনা।
- সর্বশেষ অতিরিক্ত সময়।
পরিশেষে আপনার যেটি দরকার, সেটি হলো সময়। আপনি যখন ইউটিউবিং শুরু করবেন তখন আপনাকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে ভিডিও রেকর্ডিং করতে হবে। ভিডিও কন্টেন্ট নিয়ে ভাবতে হবে কোন বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরী করবেন কখন ভিডিও আপলোড করবেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনাকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে।